প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা একটি রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাহিত্য ও সংষ্কৃতিক প্রতিরোধ - শাফি সমুদ্র

সর্বশেষ লেখা

Home Top Ad

প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা কোনো ফ্যাশেনবল বিষয় নয়, যা দিয়ে আপনি নিজের পাছায় একটা সীলমোহর লাগিয়ে ঘুরে বেড়াবেন...

মঙ্গলবার, ৬ মার্চ, ২০১৮

প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা একটি রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাহিত্য ও সংষ্কৃতিক প্রতিরোধ

কোনকিছুই সীমাবদ্ধ নয়, নির্দিষ্ট সীমানা দিয়ে কোনো কিছুই আঁটকানো যায় না, শুধুমাত্র ভৌগলিক সীমারেখা ছাড়া। সব অসীমতার ভিতরে নিজের কৃতকর্ম-সৃষ্টিকর্ম-শিল্পকর্ম ব্যক্তি নিয়ে যেতে যান অনির্দিষ্টে। এই মুক্ত আর ব্যক্তির ভিতরের স্বাধীনতাই এর প্রেরণার প্রথমসূত্র। সঙ্গতকারণেই ব্যক্তি চিরোকাল শূন্যতা থেকে সবকিছু নির্মাণ-বিনির্মাণ করে ক্রমশ শূন্যতার দিকেই ধাবিত হতে থাকেন। কিন্তু এই এক শূন্য থেকে আরেক শূন্যের ভিতরের অভিযাত্রায় তিনি রেখে যান একটি পরিকল্পিত মনস্তাত্ত্বিক নির্দেশনা। প্রবাহিত সময়ের উপকূলে নিজেকে ভাঙতে ভাঙতে, বাতিল করতে করতে পুনর্বার গড়ে তোলেন একটি সামাজিক-রাজনৈতিক-প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক-অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক-মনস্তাত্ত্বিক চিন্তা জগতের ক্রিয়া-বিক্রিয়ার বহুমাত্রিক অণুবীজ। 

আমরা ভাবতে থাকি, আমাদের বহুমাত্রিক জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে বাধা-বিপত্তি-প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি আর ক্রিয়ার বিরোধীতায় পুঁজির শকুনের দীর্ঘ ডানার উপর ভর করে ভূ-ভাগের জনগোষ্ঠির জীবনে তেড়ে আসে রক্তচক্ষুর এক অচেনা অবয়ব। নিয়ন্ত্রণের হাল ধরে কর্তৃত্ব স্থাপনে শাসন করতে থাকে গণমানুষের সংস্কৃতি-দৈনন্দিন জীবনচিত্র। অর্থনীতির গুহাপথে হাঙরমুখে গিলে খায় শ্রম ও মেধার অধিকার, চিরায়ত সামাজিক সক্ষমতাকে অবজ্ঞা করে চিরাচরিত সমাজের অন্দরে নিত্যনতুন কার্যবিধি আর নানান কলাকৈবল্যে সহসা ঢুকে পড়ে আরোপিত রীতিনীতি, অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণের সাথে সাথে বাণিজ্যের বহুধারায় প্রতিটি ক্ষেত্রে বিভক্ত ও মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে রাজনৈতিকভাবে রাষ্ট্রিয় সিস্টেমের মাধ্যমে জনগোষ্টিকে নিয়ন্ত্রণ করার একটা লক্ষ্য প্রস্তুত  করে। ক্রমশ আমাদের মনস্তাত্বিক জগতও অলস-বুদ্ধিবৃত্তিহীন-অধ:নস্ততার শিকার হতে থাকে। 

এই সংস্কৃতিক-রাজনৈতিক-মনস্তাত্ত্বিক দখলদারিত্বের অন্তরায় রয়েছে প্রতিষ্ঠান এবং বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান লক্ষ্যমাত্রা হয়ে ওঠে মুনাফা। পুঁজির মুনাফা অর্জনই তাদের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। তার জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষেত্র প্রস্তুতে প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষ এবং বস্তুগতভাবে পায়ের নখ থেকে শুরু করে মাথার চুল পর্যন্ত, জন্ম থেকে মৃত্যু, প্রথম চিন্তা থেকে সর্বশেষ চিন্তা, এক সূর্যদোয় থেকে আরেক সূর্যদোয় পর্যন্ত সবকিছু দখলে ও নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। এই দখলদারিত্ব, নিয়ন্ত্রণ, স্রোতে ভেসে যাওয়া, পুঁজির কাছে ব্যক্তির নতমুখি, ক্ষমতার ছায়াতলে বেড়ে ওঠা স্বভাব, নিজের ভিতরে অন্যের দখলের সুযোগ প্রস্তুত করার বিপরীতে এবং এই সকল সিস্টেমের বিরুদ্ধাচারণের মাধ্যমে ব্যক্তির সত্ত্বা ও ব্যক্তি স্বাধীনতাকে প্রতিষ্ঠিত করাই প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা। ব্যক্তি সত্ত্বা ও ব্যক্তি স্বাধীনতার ভিতর দিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যক্তি জীবন ব্যবস্থাপনা, যা পর্যায়ক্রমিক সংস্কৃতিক সভ্যতায় মনোজগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ভিতর দিয়ে নির্দিষ্ট ভৌগলিক, জাতিসত্ত্বা এবং বৈশ্বিক পরিবর্তনের যথাযথ কারণ। 

একটি ভৌগলিক জনগোষ্ঠির প্রচলিত ধ্যান-ধারণা-আদর্শ স্বাভাবিক সাবলীল জীবনযাত্রা প্রভাবিত করার জন্য বা প্রভাব বিস্তার করার জন্য তৈরি সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পদ্ধতিগত আগ্রাসন প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থাপনাই মূলতঃ প্রতিষ্ঠান। স্থায়ী ও অস্থায়ী সংঘবদ্ধভাবে পরিচালিত একটি রূপরেখা, যা জনগনের উপর সর্বদা প্রতিষ্ঠা-তার সিদ্ধান্ত ও মুনাফা বাস্তবায়ন করে থাকে। একজন স্বাধীনচেতা মানুষ কিংবা তার সংষ্কৃতি-সমাজের উপর প্রতিষ্ঠান তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাচীন কাল থেকে বিভিন্ন ধর্ম, দেব-দেবতা-উপদেবতার মাধ্যমে তার সরূপ প্রকাশ করে আসছে। তারই ক্রমধারায় বিভিন্ন ধারণা, মতবাদ, কৌশল, যুক্তি, আদর্শের মাধ্যমে বর্তমান সময়ে বৈশ্বিকভাবে অঞ্চলভিত্তিক ক্ষমতা, বাণিজ্য, পুঁজি, সামরিক, মিডিয়ার প্রসারের জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে ভিন্ন ভিন্ন মোড়ক ও মুখোশে প্রতিষ্ঠান তার আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছে। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা-নীতিনির্ধারণী-প্রায়োগিক পদ্ধতির সমীকরণে তা এক ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়েছে আমাদের মধ্যবিত্ত-নিন্মবিত্ত ও অন্তজ শ্রেণির জীবনধারায়।

জনগন চিরকালই প্রতিষ্ঠানের কাছে একজন ভোক্তা বা সম্মানিত ক্লায়েন্ট হিসেবে বিবেচিত। প্রতিষ্ঠান তার রুচিবোধের বহি:প্রকাশ এই জনগনের ভিতরে প্রকাশ করে থাকে, এটাই তার সহজাত স্বভাব। প্রতিষ্ঠানের প্রধান বাণিজ্যিক লক্ষ্য মিডলক্লাস। সেকারণে বাণিজ্য ও তাদের পণ্য প্রসারের জন্য এই শ্রেণিকে-শ্রেণিসচেতন করে তোলে মনস্তাত্বিকভাবে-সংস্কৃতিকভাবে। এর জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় বিভিন্ন মিডিয়া, রঙবেরঙের বাহারী বিজ্ঞাপনে মধ্যবিত্তের রুচি নিয়ে টানাটানি করতে হয়। আবার সামাজিক দায়বদ্ধতা তৈরিতে, চিরকালীন সংস্কৃতিকে বদলে দিতে, নিজের অভ্যাসের বিপরীতে নিজেকে দাঁড় করাতে, ব্যক্তি উন্নয়ন ঘটানোর নামে প্রতিষ্ঠিত হয় এনজিও নামক প্রতিষ্ঠানগুলো। যাদের কাজ উন্নয়নের নামে আর্থিক স্বচ্চলতা সৃষ্টির অজুহাতে ঋণের বোঝা মধ্যবিত্তের মাথায় চাপিয়ে দেয়া এবং সেই অর্থ পুঁজি নিয়ন্ত্রীত প্রতিষ্ঠানের সুসজ্জিত বিজ্ঞাপনী ধাঁধাঁয় আক্রান্ত হয়ে তা খরিদ করা। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগকৃত পুঁজি জনগনের মাধ্যম দিয়ে পুণরায় মুনাফাসমেত প্রতিষ্ঠানের কাছে ফিরে যায়। সকল ভূক্তভোগী এবং যন্ত্রণার মালিকানা নিয়ে জনগনকে সন্তুষ্ট থাকতে হয় প্রতিষ্ঠানের পদমূলে। 

মুনাফা অর্জনে প্রতিষ্ঠান তার প্রথম আঘাতটা করে একটি জাতির সংস্কৃতিতে। পুঁজি, সংস্কৃতির ভিতরে ঢুকিয়ে দেয় প্রতিষ্ঠানের নির্মিত রুচিবোধ-যা মধ্যবিত্ত শ্রেণি সহসাই গোগ্রাসে গিলতে থাকে। সাহিত্য-নাটক-সঙ্গীত-ইভেন্ট-ক্রীড়া-চলচ্চিত্র-বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান খুব সহজেই ঢুকে পড়ে মিডলক্লাসের অন্দরমহলে। প্রবাহমান একটি সংষ্কৃতিকে ভেঙে প্রতিষ্ঠান নিজের রুচিমাফিক একটি নিজস্ব সংস্কৃতি গড়ে তোলে প্রতিটি জাতির মননে। ফলে অধিকাংশ মানুষেরা এই প্রতিষ্ঠানের পাটাতনে ধ্যানমগ্ন হয়ে নিজের সৃষ্টিকর্মে মনোনিবেশ করে আর তাদের ইচ্ছামাফিক বাজারী মশলা উৎপাদন করে বাহবা কুড়াতে থাকে। পক্ষান্তরে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক তারা স্বীকৃত হয়ে অর্জন করতে থাকে পদক-মেডেল আর মিডিয়া তা স্বমহিমায় প্রচার করে পশ্চাৎপদে একটা কষে থাপ্পড় মেরে উৎসাহপ্রদান করে থাকে। উল্লেখ্য যে, এতে তারা জীবিকা নির্বাহ করার একটা পরিষ্কার পথও খুঁজে পায়। অর্থ্যাৎ সৃষ্টি বিপননের একটি দোকান খুলে বসে। অর্থ্যাৎ সেইসব সৃষ্টিশীল অধিপতিগণ প্রতিষ্ঠানের ছায়াতলে একেকটি পণ্য হয়ে প্রতিনিয়ত নিজেকে বেচতে থাকেন সস্তা বাজার দরে। শেয়ারবাজারের মতো তার আবার যথেষ্ট উত্থান-পতনও রয়েছে। এই উত্থান-পতনের পিছনে আবার একটি উন্নতমানের সিন্ডিকেট রয়েছে, যারা ব্যক্তির বা লেখক-শিল্পী-খেলোয়াড়-নির্মাতা-বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের ভাগ্যের নিয়ন্ত্রক হয়ে যায়।

প্রান্তিক জনগোষ্ঠি পরম্পরায় অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণের উপরেই নির্ভরশীল ছিলো, বৈদিক ভারতের কাল থেকে এই ঋণের ব্যবস্থাপনা মানুষের ভিতরেই ছিলো, যা জনগোষ্ঠির সহনীয় ক্ষমতায় তার কার্যসিদ্ধি সম্পাদন করতো। ফড়িয়া-ব্যাপারী এবং ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের মাধ্যমে আমাদের দেশে তা প্রাতিষ্ঠানিক রূপে আবির্ভূত হলো ষাটের দশকে। ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়। ফলে প্রতিষ্ঠানের সেবা বিতরণ করে এবং মূল্য আহরণ করে অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক বা অন্যান্য প্রেক্ষাপটে মুনাফা অর্জন করে। ব্যবসায়িক মডেল তৈরি করার প্রক্রিয়ায় ব্যবসায়িক কৌশলের এই অংশ জনগোষ্ঠির নিয়ন্ত্রকের নেপত্থ্য ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। বাজার নিয়ন্ত্রণ, ব্যবস্থাপনা, প্রচারণার জন্য সৃষ্টি হয় সিন্ডিকেট। সংগত কারণে বাণিজ্যের এই গভীরতম উদ্দেশ্যে একটি বড় জনগোষ্ঠি নিষ্পেষিত হতে থাকে। সিন্ডিকেট সবসময় বাজার নিয়ন্ত্রনে ভূমিকা রাখে। পণ্যের দরদাম-উর্দ্ধগতি-নিন্মিগতি সবকিছুই সি-িকেটের নিয়ন্ত্রণাধীন। এই সিন্ডিকেট ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সর্বত্র, খুচরা বাজার, পাইকারী বাজার, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারসহ সব ধরনের বাণিজ্যিক এবং মুনাফাভোগী কারবারীর সাথে সিন্ডিকেটে তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। তদ্রুপ শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিতে সিন্ডিকেটের আধিপত্য বিস্তর। এই সংঘবদ্ধ দস্যুদলের সাথে সাধারণ শিল্প¯্রষ্টারা জিম্মি হয়ে থাকে। সংঘবদ্ধ দলের পৃষ্ঠপোষকতায় অকশন মার্কেটে শিল্পের কেনাবেচাও বেশ জমজমাট। সিন্ডিকেটই নির্ধারণ করে অকশন মার্কেটে কোন শিল্পীর চিত্রকর্মের মূল্য চড়াদামে বিক্রি করবে কিংবা কোন শিল্পীর চিত্রকর্ম পড়ে যাবে তার সবই তারা নিয়ন্ত্রন করে শিল্পীর কদর বৃদ্ধি ও কমাতে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। তাদের বিনিয়োগকৃত শিল্পীর পিছনের প্রাথমিক ইনভেস্টমেন্টের বহুগুনে পরবর্তিতে সেই চিত্রকর্ম বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করে, তেমনি এই সিন্ডিকেট দখল করে আছে আমাদের শিল্প সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায়। সঙ্গীত-নৃত্য-নাটক-চলচ্চিত্র-সাহিত্যর সব শাখায় সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম ভয়ঙ্কর রূপ ধারন করে আছে গোটা পৃথিবীতে। ফলশ্রুতিতে সৎ শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চা থেকে যায় অন্ধকারে, পাঠক, দর্শক শ্রোতার অগোচরে। অর্থাৎ পুঁজি গিলে খায়, চেটেপুটে খায় লেখক শিল্পীর হৃৎপিণ্ড।

সৃষ্টির উম্মাদনায় মত্ত শিল্পীর শ্রম-সংগ্রাম, আগুনের কুন্ডুলীতে লেখক শিল্পী নিজেদেরকে পোড়াতে থাকেন, পুড়তে পুড়তে নিজের ছাইভষ্মের ভিতরে নিজেকে পুণর্বার খুঁজতে থাকেন। নিজেকে প্রতিনিয়ত পুড়িয়ে নিজের ক্ষতর দিকেই নিরুত্ত্বাপ তাকিয়ে থেকে জীবন উপলদ্ধি করে নির্মাণ করে চলেন তাদের মহৎ সৃষ্টিকর্ম। আর সেই সৃষ্টিকর্মকে বাজারে বেহাত হয়ে হয়ে যায় পুঁজির মোড়লদের সূক্ষ্ম ইশারায়। পুঁজির বেহায়া নৃত্যে যখন এইসব শিল্পীরা খেমটা নাচ নাচতে নাচতে হো হো করে হেসে ওঠেন তখন বাজারও তাদেরকে রাক্ষসের মত গিলে খেতে থাকে তাদের অস্তিত্ব। বীভৎস শব্দের ভিতরে ক্রমশ হারিয়ে যান কবি-শিল্পী-সাহিত্যিক, বিষাক্ত রক্তকণিকায় নিজের মেধাবিক্রি করে সহসাই বিখ্যাত বনে যাওয়ার উম্মাদনায় মাতাল হতে থাকেন আর মিডিয়া তাদের প্রতি মুহূর্ত বিক্রি করতে থাকেন নোনা জলের দামে। পুঁজির এই সংঘবদ্ধদল দখল করে নিয়ে যায় আমাদের পরমাত্মা, আমাদের প্রকৃতি। আমাদের সুন্দরগুলো চিৎকার দিয়ে পুঁজির করতলে আত্মহুতি দিচ্ছে। সূচিবদ্ধ আয়ু হারানো কান্নায় ভেঙে যাচ্ছে আমাদের স্বপ্ন হয়ে বেঁচে থাকা ব্যক্তি স্বাধীনতা। মূর্ত-বিমূর্ত শিল্পের রক্তপ্রবাহ ইশারার অগ্নিজলে ডুবতে ডুবতে ভেসে ওঠে আবার ভাসতে ভাসতে ডুবে যায় অতল গভীরে, আমরা হারিয়ে ফেলি আমাদের অধিকার, বিষের প্রবঞ্চনা। অসম্ভব রক্তপাত শেষে আমাদের জন্য কিছুই থাকেনা, পাখিদের নিঃসঙ্গতা আর দুপুরের সুলোলিত কান্না ছাড়া। পূর্ণ জীবন শেষে এই পুঁজির করতলে বেঁচে থাকা শিল্পসত্তা, শিল্পের মৃত্যুতে গভীর শোক ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। 

সঙ্গত কারণেই প্রকৃত ¯্রষ্টা তার শিল্পের অবধারিত মৃত্যু প্রার্থনা করেনা, করতে পারেনা। আর তখন তিনি তার এই নির্ঘাত মৃত্যুর পথ থেকে সরে এসে মৃত্যুর চরম প্রতিপক্ষ হয়ে বুক টানটান করে দাঁড়িয়ে থাকেন প্রবাহমান স্রোতের বিপরীতে। সে এক চরম পর্যায়ে নিজেকে নিয়ে যেতে থাকেন, তার সামনে সকল প্রতিবন্ধকতাকে তুচ্ছজ্ঞান করে নিজের সকল প্রভাবকে ছুড়ে ফেলে দেন নগরের নর্দমায়। সমস্ত মোহের উর্দ্ধে উঠে তার বিস্তার ডানা মেলে দেন বিস্তীর্ণ আকাশে, যেখানে নিজেই নিজের প্রতিপক্ষ হয়ে প্রতিনিয়ত নিজেকে বাতিল করতে চান। যুক্তি-বিজ্ঞান-দর্শন-কৌশল-পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তিনি পোস্টমার্টেম করতে থাকেন তার সৃষ্টিকর্মের, প্রচলিত চর্চার বিপরীতে তিনি চলতে চলতে খুঁজে পান জীবনযাপনচর্চাজ্ঞানের এক সুড়ঙ্গপথ, সেখানে তিনি একাই হাঁটেন তুমুল জনস্রোতের বিপরীতে। আর একদিন উন্মুক্ত করে দেন প্রচলিত জীবন ব্যবস্থাপনার সুউচ্চ নির্দেশনা, এই প্রথাবিরুদ্ধ স্বভাব অন্ধকারাচ্ছন্ন চোরাবালির বিপরীতে আলোকবর্তিকা হয়ে বিচ্ছুরণ ঘটাতে থাকেন শিল্পীমাত্রই, এই পথে তিনি হন একমাত্র অভিযাত্রী।অন্তর্দশনের জালে বন্দী হওয়া প্রথাবিরুদ্ধ মানুষের স্বভাব নয়। প্রচলিত প্রথা, অশালীন জড়তা, পরাজয়ের শঙ্কা, প্রতিষ্ঠানের লেজুড়বৃত্তি, ক্ষমতার তোষামদী, কর্মফল প্রাপ্তীর প্রত্যাশা, আত্ম প্রচারের মোহ, পুঁজির দাসত্ব, মিডিয়ার তল্পীবাহক, সৃষ্টির বিপনন, ব্যক্তিবাদী প্রতিযোগীতার প্রবৃত্তি, এ ধারার ফর্মূলায় প্রতিষ্ঠান তার জাল বিছিয়ে রাখে। প্রতিষ্ঠান তার মর্জিমাফিক দাসত্বের গোত্রচিহ্ন এঁকে দেয় তার লেখক শিল্পীর পবিত্র কপালে। লেখক-শিল্পী-চিন্তা-দর্শন যখন প্রতিষ্ঠানের এই কর্মকৌশলের বিপরীতে অবস্থান করে শিরদাঁড়া টানটান করে চিৎকার করতে থাকেন, তখন তিনি হয়ে ওঠেন প্রতিষ্ঠানবিরোধী। প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা কোনো একক বিষয় নয় বা কোন খ-কালীন বিষয় নয় এটি একটি জীবন পদ্ধতি ও মনস্তাত্ত্বিক সিদ্ধান্ত, প্রতিষ্ঠিত সকল পদ্ধতির বিরোধিতা।

প্রতিষ্ঠানের বীভৎস চেহারা শিল্পীর অস্তিমজ্জায় মিশে গিয়ে পণ্যে পরিণত করার প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করতে সচেতন শিল্পস্রষ্টাই প্রস্তুত থাকেন, থাকতে হয়। অনেক শিল্পস্রষ্টা আছেন যারা স্বভাবতই বিরোধিতা করতে থাকেন কিন্তু প্রকৃত অর্থে বিরোধিতা এবং প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা আবার এক নয়। শুধুমাত্র বিরোধিতার জন্ম নেয়-‘না পাওয়ার সঙ্কট থেকে’, ‘সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবার কারণে’ কিংবা ‘প্রতিযোগীতার বাজারে টিকতে না পারা’য় একপ্রকার বিরোধিতা করতে থাকেন। কিন্তু সে ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা সম্পুর্ণ একটি জীবনধারার ব্যাপার, উপোলব্ধিগত সিদ্ধান্ত নেবার বিষয়। প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা প্রসঙ্গ আসলে অনেকেই প্রথমে ভেবে থাকেন এঁরা বুঝি প্রতিষ্ঠানকে অস্বীকার করা বা শুধুই প্রতিষ্ঠানের বিষয় এবং এটাও ভেবে থাকেন প্রতিষ্ঠানবিরোধিরাও একটি প্রতিষ্ঠানের মুখোশ পরে থাকে কিংবা তারাও একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। কিন্তু তারা কখনোই বুঝতে চাননা যে প্রতিষ্ঠান নামক ইটকাঠপাথরের ইমারত কিংবা প্রতিষ্ঠান নামক জড়বস্তু অথবা বিষয়ভিত্তিক কোন প্রতিষ্ঠানের বিরোধিতা করা, মিডিয়া আর পুঁজির বিরোধিতা করা প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার কাজ নয়। প্রতিষ্ঠান এক প্রকার শক্তি। যে শক্তিবলে মানুষের উপর মানুষের শোষণ, নৈরাজ্য, দৌরাত্ম্য, অনৈতিকতা, দূরভিসন্ধি, বাণিজ্যিক বলয়, মিডিয়ার মেকি চরিত্র, উদ্দেশ্য প্রণিত মুনাফা অর্জন এবং পুঁজির অপ-প্রয়োগ এরকম সংঘটিত যে অপকর্ম হয় সেটার বিরোধিতাই প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা। 

প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার প্রধান শক্তি তার ভাষা ও সাহিত্যের শক্তি। ভাষা ও সাহিত্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানের আধিপত্য, পুঁজির দৌরাত্ম্য, মিডিয়ার কেরামতি, ক্ষমতার বিভীষিকা ও সংঘবদ্ধ বাণিজ্যিক মাফিয়াদের বিরুদ্ধে চরম প্রতিরোধের প্রকাশ। ভাষা দিয়ে সেইসব দস্যূদের বিরুদ্ধে লড়াই, সাহিত্যের সুচিন্তিত মতামতে মধ্যবিত্তের চিন্তার আড়ষ্টতা ভেঙে তাদেরকে দাঁড় করানো হয় চরম সত্যের মুখোমুখি। তখন তারা বুঝতে চেষ্টা করেন একটি প্রতিষ্ঠান কিভাবে তাদেরকে ধীরে ধীরে আত্মসাৎ করে ফেলে। কিভাবে তাদেরকে স্বাধীন হওয়া থেকে বঞ্চিত করে খর্ব করতে থাকে মননশীলতা। প্রতিষ্ঠানের সক্রিয়তা আর নিষ্ঠুরতার ভিতর দিয়ে পুঁজির আধিপত্যে রাজনৈতিক সংস্কৃতির যে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় তা গোটা জাতির উপর খুব সূক্ষ্মভাবে তার প্রভাব প্রতিফলিত হয়, যা সাধারণ দৃষ্টিতে ধরা পড়েনা। কেনোনা ততোদিন তার অনুপ্রবেশ ঘটে যায় মধ্যবিত্ত মননে, মধ্যবিত্তের ভিতরে প্রতিষ্ঠানের এই অনুপ্রবেশ ঠেকানো কিংবা প্রতিরোধের সংস্কৃতি এখন খুব জরুরী বিষয় হয়ে পড়েছে। সেমতে ভাষার প্রচন্ড আক্রমণে প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতির ভূত মধ্যবিত্তের মনন থেকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে আর ক্রমশ চিহ্নিত করতে হবে প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত চেহারা, তাদের বীর্যপুঁজ। পক্ষান্তরে প্রতিষ্ঠানবিরোধী মনস্কতায় চিহ্নিত করা জরুরী তার অবস্থান, সংস্কৃতিক প্রতিরোধে তার কর্মপরিকল্পনা, ভাষার আক্রমণ, প্রথাবিরুদ্ধ জীবন পদ্ধতির।

আমাদের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আমাদের দেশে যে প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে আমরা তা অস্বীকার করতে পারিনা, কিন্তু সেই প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করা যেতেই পারে, প্রতিষ্ঠানের যে অনিয়মতান্ত্রিক বা জনগণের আশা-আকাক্সক্ষ্যার বাইরের কাজগুলি সংঘটিত হয়ে থাকে, যা জনগণের উপর এক বিরূপ প্রভাব পড়ে তার বিরোধিতাই প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা অন্যতম লক্ষ্য, কিন্তু এটিই চূড়ান্ত নয়। সমষ্টিগত ভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রের ভিতরে বিদ্যমান যে যে প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে কিংবা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তার অন্তর্গত ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠেছে তার বিরোধিতায় জনগণের পক্ষে ভাষার সক্রিয়তায় পাঠকের সামনে তথা জনগনের সামনে তুলে ধরার একটি দায়বদ্ধতা নিজের ভিতরে ধারণ করা।

সেক্ষেত্রে আমাদের সংস্কৃতির ভিতর দিয়ে যে প্রাতিষ্ঠানিক অবয়ব প্রকাশ পায় এবং তার বিপরীতে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার অবস্থান স্পষ্ট করা হলো:

আপত: দৃষ্টিতে প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার এই তুলনামূলক পর্থক্য লক্ষ্য করা গেলেও প্রতিষ্ঠানের ভিতরে রাজনৈতিক অন্তর্দৃষ্টি গভীর ভাবে উপোলব্ধি করা যায়। এই রাজনীতির পৃষ্ঠপোষক হিসাবে ক্যাপিটাল তার অবস্থান নিশ্চিত করে। পুঁজির দুটি রঙ, শাদা এবং কালো, এই দ্বিমুখি রঙের পুঁজির নিরাপত্তার জন্য তৈরি হয় রাজনৈতিক এবং সামাজিক বলয়, যা দ্বারা একটি সুরক্ষিত স্তর তৈরি হয়। ব্যক্তি সম্পদ, ব্যক্তি মুনাফা, ব্যক্তিগত মালিকানা বৈধতা দিয়ে সে আইন তৈরি করে, এই আইনকে কার্যকরি করার লক্ষ্যে গড়ে তোলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। যেমন আইন বিভাগ, আদালত, জেলখানা, পাগলা গারদ, শোধনাগার, মিলিটারি, পুলিশ, সদর-গোপন বিভিন্ন বাহিনী, হরেক রকমের সিন্ডিকেট (যা ধারা উপধারা আইন এবং অস্ত্রদ্বারা সজ্জিত), স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম, ধর্মিয় প্রতিষ্ঠান (সকল ধর্মই ব্যক্তিগত সম্পদকে সমর্থন করে), ক্লাব, বিভিন্ন বিনোদন, মিডিয়া, ইভেন্ট সমস্তকিছুর ভিতর দিয়ে মানুষের মগজ ধোলাইয়ে তাদেরকে অনুগত করার চেষ্টা করা হয়। তারা তাদের পুঁজির মুনাফাকারী কারবারকে সচল রাখার চেষ্টায় লিপ্ত থাকে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় পুঁজিবাদী রাষ্ট্রিয় কাঠামোয় সকলের রাজনীতি করার অধিকার আছে কিন্তু সেটা তাদের এনলিস্টমেন্টের আওয়তায় থেকে নির্দিষ্ট সীমা-পরিধির ভিতরেই করতে হবে অর্থ্যাৎ বিরোধী দল বলতে এখানে তাদের অনুমোদিত বিরোধীদল। যেমন অনশন করার অধিকার, স্মারকলিপি দেয়া, প্রতিবাদী এবং প্রতিকি সমাবেশ করা, মিছিল মিটিং করার অধিকার আছে, সমালোচনা করার অধিকার আছে কিন্তু সাংবিধানিক ভাবে তাদের তৈরি করা সংবিধান আইন-কানুন এবং টোটাল কার্যবলির ভিতরে যে মনাবতা বিরোধী চরম শোষণমূলক উপাদান আছে সেগুলো ভাঙার প্রশ্ন তুললেই তার জন্য তাদের সজ্জিত বাহিনী প্রস্তুত রাখে। জেল-জরিমানা-খুন-গুম-জ্বালাও-পোড়াও-দখল-লুট সবই পুঁজিবাদী ব্যবস্থাপনার অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য।

প্রাতিষ্ঠানিক এই প্রক্রিয়া প্রচলিত জীবনে প্রকটি চলমান ঘটনা। এই ঘটনার বিপরীতে একদল মানুষ-মানুষের মুক্তির জন্য তাদের ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি দিয়ে লড়াই করতে থাকে জীবনভর। একদিকে রয়েছে প্রতিষ্ঠানের সুদূর প্রসারি কর্মপরিকল্পনা, সংঘ-জাতিসংঘ-সুসজ্জিত সমরাস্ত্র-অর্থনৈতিক সা¤্রাজ্য-বিশ্বব্যাপী প্রচারণার সমীকরণসহ নানান কলাকৌশল। এই ব্যপকতার ভিতর দিয়ে শুধু মানুষের নিশ্চিত নিরাপদ অধিকারের জন্য প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার পাটাতনে শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষেরই দায়িত্ব। যারা এই দায়িত্ব কাঁধে নিতে চাননা স্রোতের ভিতরে ভাসতে থাকেন আসলে তারা কখনোই মানুষের জন্য, মাটির জন্য কিছুই করার ক্ষমতা রাখেন না কিংবা মনস্তাত্ত্বিকভাবে ব্যক্তি স্বার্থপরতা ছাড়া কোন কিছুর বিকাশ তাদের ভিতরে ঘটেনা। 

লিটলম্যাগাজিন মূলত সেই পাটাতন যা চিরকালই স্রােতের বিপরীতে যাত্রা করে, রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক-মিডিয়ার আগ্রাসনের বিপরীতে এক নতুন নির্দেশনা তৈরি করে। এমনতবস্থায় শতশত নামধারী ছোটকাগজ প্রকাশিত হয়ে আসছে কিন্তু চূড়ান্ত অর্থে তা ছোটকাগজ নয়, দেখতে ছোটকাগজের মতো। যে কাগজগুলি কোন দায়বদ্ধতা ঘাড়ে না নিয়ে একপ্রকার সংকলন ভূক্ত হয়ে নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখছে। অনুরূপ, মফস্বলীয় কায়দায়ও নির্মিত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার পাটাতনে বেশকিছু ছোটকাগজ। পুর্ণ প্রতিষ্ঠানবিরোধিতায় যে ছোটকাগজগুলি সক্রিয়ভাবে পাঠকের দরোজায় কড়া নাড়ে- ‘দ্রষ্টব্য’, ‘প্রতিশিল্প’, ‘গাণ্ডীব’, ‘করাতকল’,‘চালচিত্র’, ‘শিরদাঁড়া’, ‘জঙশন’, ‘সূর্যঘড়ি’,‘শাব্দিক’। উল্লেখ্যিত ছোটকাগজগুলির সক্রিয়তা রয়েছে এবং আরো অধিক প্রকাশিত ছোটকাগজ প্রতিষ্ঠানবিরোধিতায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে।

প্রচলিত ও জনপ্রিয় ধারার লেখকদের বিপরীতে ছোটকাগজের সক্রিয় গোটা শতেক লেখকগণ এক নিজস্ব পাঠক বলয়ও তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার স্পর্ধায় পুণর্বার জেগে উঠবে ছোটকাগজের এক নতুন গতিপথ, যা নতুন এক চিন্তার পাঠক তৈরি, সচেতন জনগোষ্ঠি ও অপ্রাতিষ্ঠানিক মনষ্কতায় মধ্যবিত্তের ভিতরের মননকে নিশ্চয়ইউজ্জীবিত করবে।



ロ শাফি সমুদ্র




Pages