নরসিংহ, ম্যাঙথাও আর আকষ্মিক ঝড়ের সমুদ্রসঙ্গম কিংবা বিষ্মৃতির তলদেশে হারিয়ে যাওয়া উত্তরসূরিদের গল্প - শাফি সমুদ্র

সর্বশেষ লেখা

Home Top Ad

প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা কোনো ফ্যাশেনবল বিষয় নয়, যা দিয়ে আপনি নিজের পাছায় একটা সীলমোহর লাগিয়ে ঘুরে বেড়াবেন...

মঙ্গলবার, ৬ মার্চ, ২০১৮

নরসিংহ, ম্যাঙথাও আর আকষ্মিক ঝড়ের সমুদ্রসঙ্গম কিংবা বিষ্মৃতির তলদেশে হারিয়ে যাওয়া উত্তরসূরিদের গল্প

ঠিক তখনো নরসিংহের মাথায় সূর্য তার প্রখরতা ছড়ায়নি। আদিকাল থেকেই স্বর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে মাথা উঁচু করে সে দাঁড়িয়ে আছে। মাথার উপর ভয়ঙ্কর আকাশ বহুদিন থেকে তার সাথে বিরোধ করে আসছে। বিরোধের আদি অন্ত বলে কিছু কারোর জানা নেই। শুধু প্রতিবেশি ম্যাঙথাও তা গোপন করে রেখেছে উত্তরসূরিদের কাছে। সে কেবলই গোপন কথার জীবন্ত স্বাক্ষি। ম্যাঙথাও খুব ভালোভাবে জানে ভূখণ্ডের সাথে অগ্নিবলয়ের তুমুল সংঘর্ষে তার এবং প্রতিবেশি নরসিংহের জন্ম। জন্মাবধি তারা ছিলো যুতবদ্ধ যমজ।

মহান অধিপতি সূর্যই নরসিংহের সবচেয়ে কাছের সঙ্গী। দু’জনের ভিতরে পারস্পারিক বিশ্বস্ততা ও ঘণিষ্ঠতা তাদেরকে ভালোমন্দে বহুকাল একসাথে করে রেখেছে। বিশ্বাসে বিশ্বাসে সম্পর্কের ঘণিষ্ঠতা হাজার বছর ধরে ক্রমশই বেড়ে চলেছে। নরসিংহ যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ে অধিপতি তার আলো সরিয়ে নিয়ে যায় অন্য কোনো মেরুতে আর সে তখন চরম নিদ্রায় আচ্ছাদিত হয়। ঘুম ভাঙা মাত্রই অধিপতি পুণরায় নিজেকে প্রকাশ করে কিংবা অধিপতি এ গোলার্ধে এসে হাজির হয়। নরসিংহ তখন চোখ মেলে দেখে প্রিয় সঙ্গীর অনিবার্য উপস্থিতি। সঙ্গে সঙ্গেই দু’জনের আলিঙ্গন মেতে ওঠে, তাদের এই মুহূর্তগুলিকে কটাক্ষ করে সুবিশাল মেঘমালা, মুহূর্তে দু’দিক থেকে ডেকে আসা মেঘমালা নরসিংহকে আচ্ছন্ন করে রাখে। সূর্য এবং নরসিংহের মধ্যবর্তি দূরত্বের  মধ্যে মেঘ তার ভয়ঙ্কর কালো ডানা আরো বিস্তৃত করে দেয়।

মেঘ তার কালো ডানার মধ্যেই নরসিংহের বিষ্ময়কর ঘ্রাণ নিয়ে তাকে তুমুল সংকটের দিকে  ঠেলে দেয়। নরসিংহের শরীর থেকে বেরিয়ে আসা ঘ্রাণ নিমিষেই ছড়িয়ে পড়ে নির্ভেজাল প্রকৃতির ভিতর। প্রকৃতির অংশ হিসাবে ঘ্রাণ ছড়িয়ে সে সব সময় তার দায়বদ্ধতা প্রকাশ করে। পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে চলা নানা প্রজাতির প্রাণি আর উদ্ভিদকূল তাদের বেঁচে থাকার তাগিদে তা গ্রহণ করে আর নরসিংহের প্রতি নিবিঢ় শ্রদ্ধায় অবনত হয়। প্রাণভরে নরসিংহ তা উপলব্ধি করে। নরসিংহের কোনো সন্তান সন্ততি নেই, কারোর সাথে সংসার কিংবা আত্মীয়তার সূত্রেও আবদ্ধ হয়নি। শুধু ম্যাঙথাও তার যমজ বন্ধু, যমজ ভাই বলেই জানে। আর মহান অধিপতিকে তার ভিতরে নির্বিচারে ঠাঁই দিয়েছে। মেঘমালা একদা নরসিংহকে ভালোবাসতো, তাকে শীতলতা আর ছায়া দিয়ে আচ্ছন্ন রেখে তার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতো। কিন্তু নরসিংহ তা কখনোই অনুধাবন করার চেষ্টা করেনি এবং প্রশ্রয়ও দেয়নি। কেননা নরসিংহ কাউকে ভালোবাসে না আবার কাউকে ঘৃণাও কওে না। তার কাছে পাওয়া না পাওয়া, ভালোবাসা, ঘৃণা, পছন্দ, অপছন্দ বলে কিছু নেই। এগুলোকে সে মধ্যবিত্ত মানসিকতার স্বভাব বৈ কিছু ভাবে না। 

ম্যাঙথাও চিরকালই সবুজ সতেজ ও রঙিন। সে যে বিশ্বাস ধারণ করে সেটা ঠিক এরকম-সম্পর্ক-ঘটনা-সিদ্ধান্ত মূলত তাকে জন্মাবধি সবুজ করে রেখেছে। প্রকৃতির সব নিয়মের সাথে আপোষ করে বেঁচে থাকাটাই তার একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। বলা চলে নরসিংহের সব সিদ্ধান্ত ও উদ্দেশ্যের বিপরীতে ম্যাঙথাওর অবস্থান। মেঘমালার সাথেও ম্যাঙথাওর সুসম্পর্ক। তবে এ নিয়ে ম্যাঙথাও এর সাথে নরসিংহের কোনো বিরোধ নেই। কোন দ্বন্দ্ব নেই। হিংসা নেই-বিদ্বেষ নেই। এ নিয়ে তাদের ভিতরে মুখ দেখাদেখি না হওয়া কোনো উপক্রম নেই। কেননা দু’জনই তাদের ইচ্ছা ও আকাক্সক্ষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। 

নরসিংহ ও ম্যাঙথাও এর উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া আকাশ অবশ্য তার নিজের ভাষা, দূর্বিনীত শক্তি এবং চরিত্র বদলানো রূপ নিয়ে নিজে গর্বিত ক্ষমতার অধিকারী বলে দাবী করে। আর একারণে নিজের নিন্মস্তরের মেঘের ঘর্ষণ ঘটিয়ে বজ্রবিদ্যুৎ উৎপাদন করে পৃথিবীর দিকে ছুড়তে থাকে। ঝলসে দেয় সবকিছু আবার মমতাময়ী মায়ের মতো স্নান করিয়ে দেয় পৃথিবীকে। এসব কারনে নিজেকে নির্মাণ করে অসম্ভব শক্তি-মমত্ববোধ-মাতৃত্বের স্রষ্টা হিসাবে। এ নিয়ে তার মাতামাতিরও কোনো শেষ নেই।

নরসিংহ-ম্যাঙথাও-সূর্য-মেঘমালা প্রত্যেকেই স্বচরিত্র এবং স্বভাবে নিজেকে নির্মাণ করেছে স্বমহিমায়। দীর্ঘকাল এভাবে চলতে থাকা সম্পর্কগুলো পরষ্পর চেনা আর মুখস্তবিদ্যাকে ভেঙে অন্যরূপে অবস্থান করতে লাগলো। সূর্য তার নিজের কাজ ও দায়িত্বে মনোনিবেশ করলো। প্রতিদিনের নিয়মে নিজেকে বেঁধে ফেললো, অন্যকোনো দিকে তার দৃষ্টি-চালচলন-স্বভাব নিয়ন্ত্রন করে আত্নকেন্দ্রিক হয়ে উঠলো। মেঘমালা বছরের সিংহভাগ সময় ধরে নিজেকে অদৃশ্য করে রাখে। যাযাবরের মতো নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। তার ঠিকানা ও অবস্থান সহসা কেউ খুঁজে পায় না।

নিরুপায় নরসিংহ আর ম্যাঙথাও। নরসিংহ পুরুষ রূপে নিজেকে চেনালো আর মাতৃরূপে ম্যাঙথাও নিজেকে প্রকাশ করলো। সে কারণে খটখটে পাহাড় আর পাথুরে শক্তিরূপে নরসিংহ নিজেকে স্থির করলো। অন্যদিকে নরম মাটির শরীরে পাশেই ম্যাঙথাওর অবস্থান।

নরসিংহ আর ম্যাঙথাও পরষ্পর ভাব চোখাচোখি বায়ু বিনিময় একই সাথে স্নান ও নানান ক্রিয়া কর্মে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করলো। একই রৌদ্রতাপে তারা একইসাথে দ্বগ্ধ হয় আবার বৃষ্টিজলে একই সাথে ভিজতে থাকে তুমুল। এভাবেই তাদের ভাব ও ভালোবাসার শুরু। পৃথিবীতে প্রকৃতি এই প্রথম তাদের নিজেদের ভিতরে ভাব ও ভালোবাসার জন্ম দিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে শিখলো এবং নানান প্রাণিকুলের আশ্রয়কুল হয়ে উঠলো।

একদিন নরসিংহ আর ম্যাঙথাও পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলো। তারই ফলসরূপ কয়েক বছর পরে তারা সন্তান সন্ততি লাভ করলো। তাদের একটি পূত্র আর একটি কন্যা হলো। কন্যাটি ছন্দ আর তালে নুড়ি পাথরের উপর দিয়ে লাফাতে লাফাতে বহুদূর চলে যায়। ঝর্ণারূপে তার জন্ম। এই ঝর্ণা জন্মগত ভাবেই শান্ত এবং নেচে চলা শব্দে মাতাল করে রাখে প্রকৃতিকে। আর পূত্র সন্তান জিয়নত্রু বাতাসের ভিতর দিয়ে অদৃশ্যরূপে বয়ে চলে। সবকিছুকে স্পর্শ করে তার অস্তিত্ব জানান দেয়। কখনো কখনো মাতালের মতো তুমুল স্পর্ধা দেখিয়ে ল-ভ- করে দেয় অসংখ্য বৃক্ষরাজি, প্রকৃতির স্বাভাবিক গতি প্রকৃতি। পুত্রের এমন স্পর্ধায় নরসিংহ আর ম্যাঙথাও নিজেদের ভিতরে কথা কাটাকাটি আর ঝগড়াঝাটি শুরু করে দেয়। ম্যাঙথাও নরসিংহকে দোষারোপ করতে থাকে তার অতি উৎসাহ পূত্র জিয়নত্রুর এমন বোহেমিয়ান হয়ে গেছে। 

জিয়নত্রু একদিন বাতাসে ভিতর দিয়ে বয়ে যেতে যেতে প্রতিবেশি সমুদ্রকন্যাকে দিকশূন্য করে দীর্ঘঘুমে আচ্ছন্ন করে রেখেছিলো। জিয়নত্রু ভাবে সমুদ্রকন্যাই একমাত্র তার মুক্তির উপায়, সে জানে অদৃশ্য থেকে সরূপে ফিরতে হলে সমুদ্রকন্যার নীলচুল পুড়িয়ে তার ধোঁয়ার ভিতর দিয়ে সে তার রূপ ফিরে পাবে, জিয়নত্রু যে কোনো রূপে নিজেকে নির্মাণ করবে। সমুদ্রকন্যা যখন দীর্ঘঘুম থেকে জেগে উঠে আত্মপরিচয় সংকটে ভুগতে থাকবে আর যখন সে তার পরিচয় তার পরিবার প্রতিবেশিকে খুঁজতে থাকবে। যখন সে কাউকে খুঁজে পাবে না এমনকি নিজের পরিচয়-অস্তিত্ব অনুভব করতে পারবে না, তখন সে নিজেকে ছাইভষ্ম করে দিতে চাইবে কিংবা আত্নহননের সিদ্ধান্তে অবতীর্ণ হবে। এক পর্যায়ে সমুদ্রকন্যা নিজেই নিজেকে হত্যা করবে। তখন সমুদ্রকন্যার নীলচুল পুড়িয়ে তার ধোয়া গ্রহণ করবে জিয়নত্রু এবং তখনই তার ইচ্ছার পূর্ণতা ঘটবে।

সমুদ্রকন্যার জন্ম ঝড়ের অভিসম্পাত থেকে। যে ঝড় পৃথিবীর নানান সংকট থেকে জন্মলাভ করে। এমনি এক সংকটের মুহূর্তে ঝড় এবং সমুদ্রের গভীর সম্পর্ক থেকে তাদের কন্যার জন্ম। কন্যাকে জন্ম দিয়ে সেই ঝড় মিলিয়ে গেলো অন্যকোথাও। সে কখনো আর ফিরে আসেনি। সমুদ্রকন্যা কখনো খুঁজতে চেষ্টা করেনি কিংবা তার জন্মের উৎসমূল খুঁজতে চেষ্টা করেনি আগে কখনো এবং প্রয়োজনও হয়নি। সমুদ্রকন্যার দীর্ঘঘুমের ভিতরে সে সব কিছু খুঁজে পায়। তার অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ, তার বেঁচে থাকার নানান নিয়ম কানুন। যখন তার ঘুম ভেঙে যায় তখন সে নিজের ভিতরে খুঁজে পায় না কিছুই। সে ভাবতে থাকে তার জন্ম একটি দূর্ঘটনা মাত্র কিংবা তার ইচ্ছার বিরুদ্ধেই তাকে জন্ম দেয়া হয়েছে। এ কারনে সে নিজেই নিজের কাছে লজ্জিত এবং অপমাণিত বোধ করে। সে বিশ্বাস করে তার ইচ্ছামৃত্যু ঘটবে। কিন্তু সে তার জন্মলাভের প্রতিবাদে যে কোন সময়ে ইচ্ছামৃত্যু ঘটাতে পারে না কারণ সে খুঁজে বেড়ায় তার আবির্ভাবের পূর্বশর্ত কি ছিলো। কেনো তাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে এখানে প্রাণ দেয়া হলো। জিয়নত্রু সমুদ্রকন্যার এই অন্তর্নিহিত বিষয়গুলো খুব গোপনে জেনেছে। সেই থেকে সমুদ্রকন্যার ইচ্ছামৃত্যুর সময়কাল নির্ণয় করতে পেরেছে তার পূর্বসূরিদের কাছ থেকে। 

সমুদ্রকন্যা এখন গভীর ঘুমে অচেতন। আজ মহান অধিপতি তার আলোর বিচ্ছুরণ ঘটাবেন। তার আলোকশক্তিতে সমুদ্রকন্যার দীর্ঘ ঘুমের অবসান ঘটবে। অজস্র আলোকরশ্মি তার চারপাশ ঘিরে এক মহাউৎসবের আবহ তৈরি করতে থাকে আর ধীরে ধীরে সমুদ্রকন্যা তার চোখ খুলতে থাকে। চোখ খুলতেই সে দেখতে পায় তার শরীরে অন্য এক রূপ। যে রূপ সে আগে কখনো দেখিনি। সে নিজেই নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারছে। নিজের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সে সব কিছুই করতে পারছে। সে তার সামনের সব কিছুকে স্পর্শ করতে পারছে, প্রকৃতি, শরীর, বস্তু, বিষয়কে উপলব্ধি করতে পারছে। অর্থাৎ সে এখন মহাবিশ্বের সবচেয়ে বুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণে রূপান্তরিত হয়েছে। সমুদ্রকন্যা তার অভিব্যাক্তি প্রকাশে অন্যন্য হয়ে উঠছে। অর্থাৎ সে এখন পূর্ণ অর্থে মানুষ রূপে আবির্ভূত হয়েছে।

মানুষরূপে সমুদ্রকন্যা তার জন্ম ইতিহাস খুঁজতে থাকে আর বাতাসের ভিতরে অদৃশ্য হয়ে থাকা জিয়নত্রু তার সরূপ ফিরে পাবার জন্য সমুদ্র কন্যার আত্মহণনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। তাকে ঘিরে জিয়নত্রু আরেকটি আবহ তৈরি করতে থাকে। অদৃশ্য হাওয়া থেকে চিৎকার দিয়ে সমুদ্রকন্যাকে মৃত্যুর আহ্বান জানায়। তার আহ্বানে সমুদ্রকন্যা প্রতিউত্তর দিতে থাকে যে তার মৃত্যুতে হয়তো জিয়নত্রু তার রূপ ফিরে পাবে ঠিক কিন্তু সে থাকবে নিঃসঙ্গ একা। ফলশ্রুতিতে সমুদ্রকন্যা আর জিয়নত্রু পরস্পর একটি চুক্তিতে আবদ্ধ হয় যে, সমুদ্রকন্যা কোনো ভাবেই আত্মহণনের পথ বেছে নিবে না বরং তার মাথার নীল চুলের একটি অংশ ছিড়ে সেটিকে পোড়াবে। পুড়তে থাকা চুলের ধোয়া থেকে জিয়নত্রু তার রূপ কিংবা তার অস্তিত্ব ফিরে পাবে। জিয়নত্রু সমুদ্রকন্যার এই পরিকল্পনা এবং শর্ত মেনে নেয়। সমুদ্রকন্যা এবার তার মাথার পেছনের অংশের চুল ছিড়ে পুড়িয়ে এক বর্ণিল ধোয়ার সৃষ্টি করে। সেই ধোয়ার ভিতর দিয়ে জিয়নত্রু অদৃশ্য রূপ থেকে ধিরে ধিরে তার অস্তিত্ব প্রকাশ করতে থাকে। জিয়নত্রু সেও তার পূর্ণ অস্তিত্ব লাভ করে এবং পুরুষ রূপে আবির্ভূত হয়। নারী ও পুরুষ রূপে মহাবিশ্বের এই গ্রহে সমুদ্র কন্যা আর জিয়নত্রু সর্বপ্রথম আবির্ভূত হয়। দু’জন দুজনকে দেখে অভিভূত, আপ্লুত। দু’জনই পরস্পর বাক্যবিনিয়ময়, ইশারা বিনিময় এবং স্পর্শগত উপলদ্ধি করতে পারছে। তারা দু’জন সমুদ্রতট বরাবর হাঁটতে হাঁটতে তাদের অতীত উপখ্যান তাদের জন্মপূর্ব অবস্থান এবং ইতিহাস খুঁজে বেড়াতে থাকে।

তাদের জন্ম ইতিহাস এখন তাদের কাছে বিস্মৃতি হয়ে গেছে। জিয়নত্রু যে পাহাড় থেকে জন্ম তা সে আর মনে করতে পারছে না। ভুলে গেছে নরসিংহ আর ম্যাঙথাও তার পিতামাতা ছিলো, ঝর্ণারূপে তার একটি বোন ছিলো। তদ্রুপ সমুদ্রকন্যা ভুলে গেছে ঝড় আর সমুদ্রের অকষ্মাৎ মিলনে তার জন্ম। তারা তাদের পূর্বরূপ এবং পূর্বইতিহাস সম্পূর্ণরূপে ভুলে গেছে। তারা ভাবতে থাকে শূণ্যতা থেকে তাদের জন্ম এবং মানুষ হিসাবে তারাই প্রথম।




ロ শাফি সমুদ্র



Pages