ঘুম, রূপান্তরিত নারী এবং একটি পাখি - শাফি সমুদ্র

সর্বশেষ লেখা

Home Top Ad

প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা কোনো ফ্যাশেনবল বিষয় নয়, যা দিয়ে আপনি নিজের পাছায় একটা সীলমোহর লাগিয়ে ঘুরে বেড়াবেন...

মঙ্গলবার, ৬ মার্চ, ২০১৮

ঘুম, রূপান্তরিত নারী এবং একটি পাখি

গাঢ় নীল অন্ধকারকে এখন আমি অভিসম্পাত দিই। যদিও অন্ধকারের সাথে বিরোধ ছিলো না কোনদিন। বিরোধ ছিলোনা নিজের সঙ্গে। অন্ধকার উৎসবে একদিন অনিবার্য ইতিহাস টেনে ছিড়ে গেথে দিয়েছিলাম পাপের প্রাচীরে। ইশারায় ইশারায় বহুদিন শাফি সমুদ্রক শুনিয়েছিলাম উজ্জীবিত পরাজয়ের নির্মম সঙ্গীত। স্বর্ণের মতো দ্যুতিময় সকালে জন্মের কলঙ্কদাগ মুছে দুঃখবাড়ি থেকে বেরিয়েছি শাফি সমুদ্র’র উদ্দেশ্যে। আমার অনেকদিনের আপন সত্ত্বা। একবার পাখি হত্যার দিনে তার সাথে পরিচয়। পাখি, ওর দুপুরের বন্ধু, দুপুরের খাবার টেবিলের সঙ্গী। জেগে ওঠার দিন থেকে পাখিগুলোকে ও খুব বেশি ভালোবাসে। পাখি। সে তো আমার পরম শত্রু শত্রু খেলার অনুষঙ্গ। তবে কাহিনীটা বেশি দূরের নয়। খুব কাছের। যেমনটি কাছে থাকে জীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনুভূতি।

তাহলে কি জীবন আমাদের থেকে খুব দূরে? জীবন ও মৃত্যুর মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে কে? বন্ধু না শত্রু? আমাদের জানা হয়নি কিছুই। বেঁচে থাকার কি কোন নাম আছে? শ্রেণি? হয়তো নেই হয়তো আছে। নারী ও বৃক্ষের মতো নির্বিকার চেয়ে থাকার নামই কি জীবন? কিংবা মৃত্যু মানেই কি আজন্ম শৈশব ঘিরে অনিশ্চয়তার দিকে হেঁটে যাওয়া? একদিন এসব প্রশ্ন রাখতে চেয়েছিলাম ঈশ্বরের পবিত্র করকমলে। কিন্তু ঈশ্বর তিনি তো আমাকে নির্মাণ করেননি। নির্মাণ করেছিলেন যীশুকে। যীশু, সে তো ভেড়ার পালের রাখাল। জনাব ঈশ্বর, আপনিও আমাকে শুকরের রাখাল বানিয়ে খেলতে পারতেন। 

সমস্ত গ্রীষ্মকাল দীর্ঘ সমতল ভূমি জুড়ে নিরুপায় পাখিদের মতো আমাকে শুধু ভাসালে দিগন্তে। দিগন্ত যার কোন চূড়া নেই, দূর দূর সীমানায় চোখ ক্লান্ত হয়ে আসে। চোখেরও বিশ্বাস থাকে, যীশুও চোখে খুঁজেছিলেন বিশ্বাস। সুহৃদ অতিথী হয়ে একবার তিনি শাফি সমুদ্র’র সাথে রাত্রি যাপন করেছিলেন। নির্বোধ রাতে হঠাৎ স্পর্ধিত শ্লোগানে তাকে শেখালেন পাখিবিদ্যা। পাখিমন্ত্র। আর আমি শিখেছি পাখি হত্যার নানান কলা-কানুন। ব্যক্তিগত উপলব্ধিতে নিজেই নিজের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। কেন? উত্তর সহজ-জানি না। জানতেও চাইনি কখনো। কিন্তু কেন এমন হলো? কেনই বা এমন হয়। মানুষেরা কি মানুষের থেকে দূরে সরে যায় এভাবেই? ভবদহের মানুষেরা কি নিজের কাছ থেকে নিজেকে দূরে রাখে? জলা থেকে নৌকা লুকিয়ে রাখে? কবি ও প্রেমিকের নিঃসঙ্গতায় জলোচ্ছ্বাসে নাচেনা নৌকো? কেনো? উত্তর সহজ-জানিনা।
তা হলে জানা হোক নিরপরাধ জীবনবোধ। অকারণে প্রেমিকের মুখে বয়ে যাওয়া আশ্চর্য সর্বনাশ। যিনি জেগে আছেন সমস্ত আকাশ ও সুলোলিত অহঙ্কার বুকে নিয়ে। দীঘির জলে চাঁদের ডুব-সাঁতার অথবা রূপালি আলোয় মাছের সঙ্গে স্বপ্নে বিষণœ অভিমান নিয়ে যে যুবক খেলা করে আমরা তার নাম বলতে পারি না। কেননা তিনিই একবার পাখির পালকে খোদাই করে লিখেছিলেন তার নাম। তারপর সেই পাখিটা উজাড় উড়াল দিলো আমাদের দৃষ্টি সীমানার বাইরে। আর প্রেমিক সে পাখির খোঁজেই নিজেকে গোপন রেখেছেন নিজের থেকে। একদিন কাজী টিটোই আমাকে জানিয়েছিলো পাখি শিকার করতে হলে আগে পাখির চরিত্র কিংবা ভাষা জানা প্রত্যেক শিকারীর প্রথম শর্ত। তবে উড়ে যাওয়া পাখি নাকি একদিন একজন নারীরূপে পৃথিবীতে এসেছিলো। যার স্তন পান করে সে প্রেমিক যুবক তার সর্বস্ব খুইয়েছিলো। নারীর স্তন পানে দীর্ঘকাল বেঁচে থাকার বিশ্বাস পেয়েছিলো রূপান্তরিত নারীর কাছ থেকে। আর চিরকাল এমন প্রেমে আচ্ছন্ন থাকবে যে দুঃখের সর্বনাম তাকে কোনদিনই স্পর্শ করবে না। দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো মুখস্তবিদ্যার মতো পাঠ করেছিলো বিনম্র সখ্যতায়।

আহা! এ কেমন মাতাল স্পর্শ। ব্যাথার দিনে গ্রাসের ছাই উড়ে যায় ভাঙনের ভিতরে। 

কোন গভীর আলো গতিপথ ভিজিয়ে পাপের বড়শীতে গাথে জারজ সন্ধ্যা। আবেগ মিশ্রিত অস্থির আঙুলে সামরিক ইশারায় ভাঙে প্রেম। পরষ্পর ভুল জানো নিঃসঙ্গ মাছের ভিতরে। কেঁপে ওঠে গোপন গীঁট খুলে। অসঙ্খ্য নির্জনতা স্পর্শ হয় দেহের বাকলে। শরীরের কী অসম্ভব উত্তাপ। বিষঘর মোহন অন্দর পুষেছে নিরাপদ দেয়াশলাই। বিচ্ছিন্ন গোত্র ভেঙে  কামুক ঠোঁটে বসিয়ে দিলে তৃতীয় বিশ্বের খ-চিত্র। ঘুমের ভিতরে অসম্ভব প্রস্তুতি শরীরের মধ্যে ঢুকে যায় আর অন্ধের মতো সমস্ত সুখ বিছানায় সারারাত খেলা করে। নানান রকমের খেলা। এপাশ ওপাশ। কুমারী পাখি পিরীতের খাটে ধান ভানে। খট্খট খ্খট।
প্রতি সন্ধ্যেবেলা যুবক প্রসারিত করে রাখে তার নিঃসঙ্গতা।
         আর রূপান্তরিত নারী কান্নার শব্দে বুকের ঝাঁপি খুলে দেয়। 
                 বুকের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে অজস্র যন্ত্রণার লোনাজল। 
                            জলতরঙ্গের খেলায়-নেশায় মাতাল হতে থাকে যুবক। 
                                   যুবক? তাকে কি আমি চিনে থাকবো? প্রশ্ন থাকে।

প্রশ্ন থাকতে থাকতে ঘুম ভেঙে যায়। উত্তর মেলেনা। অজস্র স্বপ্ন। অজস্র প্রশ্ন। অজস্র ঘুম আমাকে শ্রেণিবদ্ধ সংগ্রামের দিকে নিয়ে যায়। সংগ্রাম? কিসের সংগ্রাম? নিজের সাথে নিজের সংগ্রাম। যুদ্ধ। অবিরাম যুদ্ধ। দীর্ঘ মেয়াদী স্বপ্নের সাথে যুদ্ধ। খোলস ভেঙে বেরিয়ে আসে স্বপ্ন। উপলব্ধির ইতিহাস ভেঙে গড়ে ওঠে বিচ্ছুরিত বিষ্ময়, বৃক্ষবাসি পাখি সঙ্গীতে বংশের চিহ্ন থেকে যায় ঘুমের ভিতরে। ইতিহাস? ইতিহাস আমাকে টানে না। ছুঁড়ে ফেলে দেয়। ছুঁড়ে ফেলে অসম্ভবের দিকে। পৃথিবীর নোঙরামীর দিকে থু দিই। ওয়াক থু বরং এর চেয়ে আরো ভালো ঘুমিয়ে থাকা।

আবার ঘুমোতে যাই। ঘুম কি আমাকে ডাকবে? হয়তো আবার ডাকবে। হয়তো ডাকবে না। তবু আমাকে ঘুমোতেই হবে। আয় ঘুম। আয় ঘুম। ঘুম...ঘুম...ঘুম...। আসুন আমরা সকলেই এবার ঘুমোতে যাই। পৃথিবী নির্মল থাকুক। শান্তিতে থাকুক। ওঁম্ শান্তি। ওঁম্

ロ শাফি সমুদ্র


Pages