১.
মৃতপাখির শবযাত্রা দৈত্যদানবের
হা'র ভিতরে বসে আছে নগরপিতাগণ
মৃতপাখির শবযাত্রা
এই নগরে পাখিদের কান্না নেই যুবুথুবু দেহে পাখির বিলাপ মরাডাল কামড়ে ভেসে আসে অসংখ্য সবুজের দেহ থেকে শহরের প্রতি সমবেদনায় বিবস্ত্র দুপুরের হাহাকারে পাখিমন জেগে থাকে প্রভূর শাস্ত্রজ্ঞানে পিতা পিতা বলে নগরভবন জুড়ে এতো দৌরাত্ম এতো হাকডাকে দেয়ালে ফাঙ্গাস পড়ে দেয়াল কি জানে পাখির চিৎকারে কতোটা জর্জরীত তার বুকের পাটাতন কতোটা নৃশংসতায় মিথ্যের বেসাতি ছিড়ে ফেলে সবুজের অন্তর্বাস ইতিহাসের নির্মম আগুন জ্বালিয়ে পাখির কঙ্কালে লেখা সভ্যতার ক্রমবিকাশ-সূর্যের হৃৎপিন্ড থেকে বিচ্ছুরিত অগ্নিনৃত্যের যৌনবিজ্ঞান নগরী জুড়ে শাসন করে নাগরিক নীতিমালা হায় প্রভূ তোমার করতলে মধ্যবিত্ত ধ্যানে নিমগ্ন আমাদের অধিকার শহরের বুকে খোদাই করা উন্নয়নের চৌর্যবৃত্ত থেকে রক্ষা করো মৃতপাখির শবযাত্রা দৈত্যদানবের হা'র ভিতরে বসে আছে নগরপিতাগণ ক্ষতবিক্ষত মানুষের মুখ হেসে ওঠে অনাচারী প্রলয় সঙ্গীতে প্রহরীদের মতো নিরুত্ত্বাপ আমাদের মলিন জীবন প্রাচীন পাথরে অরক্ষিত আর নির্মম রক্তজলে ভিজতে থাকে বেঁচে থাকার নিয়মকানুন
২.
প্রচলিত ভাগ্যের ফর্মুলা-আহা ভাগ্য
তোমার কদর নগরালয়ের সদর দরোজায়
কসাইয়ের কান্না
পুঁজির হাঙ্গরমুখে কসাইয়ের কান্নায় চোখ ছলছল রক্তের সহস্রধারায় প্রতিদিন বয়ে যায় আগ্রাসী স্বভাব কর্পোরেশনের শেকড়বাকড় যজ্ঞের জিহ্বায় অচ্ছুত অন্দর গিলে খায় বিষের পেয়ালা ঊর্দ্ধগতির তিলোত্তমা শহরে গোত্র ভেঙে ধেয়ে আসা বিজ্ঞাপনের সরিসৃপ প্রবাহিত রক্তের ভিতরে শেখায় ছলচাতুরির কলাকৌশল মুখোশ ছেড়ে রাস্তায় নামা একেকটি বিষধর সর্বনাশের মণিমুক্তা-টেবিলে সাজানো বিগত গণভোটের প্রবঞ্চনা সহজেই বিক্রি হয়ে যায় পুঁজিতন্ত্রের হাটে নাগরিকের ঘাম ও কপালের ঘ্রাণ ক্রমশ বিক্রয়যোগ্য হয়ে ওঠে দুর্বৃত্তের বাজারে রঙিন খোলস মুড়ে নিলামে ওঠে প্রচলিত ভাগ্যের ফর্মুলা-আহা ভাগ্য তোমার কদর নগরালয়ের সদর দরোজায় সংরক্ষিত প্রবেশাধিকারে জর্জরিত দুঃস্বপ্নের কাটাতারে বিদ্ধ দাবি দাওয়ারা সমস্ত নিস্পত্তি নিরাপদ আশ্রয়ে ঘুমিয়ে থাকে বর্জুয়া কপাট সূর্যের নিস্ফল আবেদনে নগরের কান্না শুকিয়ে যায় তাতানো রোদে আর পেয়ালাভর্তি অসুখবিসুখের সরল অংক কষতে কষতে প্রতিদিন ঘরে ফিরি নিরাকার অজুহাতে
৩.
মর্গের এক অচ্ছুৎ জীবন অরাধ্য উপাসনায়
নির্মমভাবে পুড়ে যায়
সমগোত্রীয় ইতিহাস
বিষের ভিতর কঙ্কালের অভিশাপ-ডোমের দরোজায় অনুদঘটিত কান্না বিরোধী বিক্ষোভে চিৎকার করতে করতে ধেয়ে আসে ময়নাতদন্তের টেবিলে-গোপন ও দূরভিসন্ধির নরোম হৃৎপিন্ড ভেদ করে বেরিয়ে আসা বাজিকরের দুঃস্বপ্ন ঘামচাতে থাকে ক্লাবঘরের রমরমা বেসাতির অজ্ঞানপথ- পথের বিভীষিকায় দানবীয় ক্ষুধাবৃত্তান্ত নির্বিঘœ ধ্যানে আমাদের কপালে এঁকে দেয় খ-িত নগরের কৃত্তিকলাপ
মর্গের এক অচ্ছুৎ জীবন অরাধ্য উপাসনায় নির্মমভাবে পুড়ে যায়-রক্তকাঙ্কালের প্রাচীন নিদ্রামগ্ন মুহূর্ত নির্দেশনামা পাঠ করতে করতে ছাইভষ্ম হয়ে উড়ে যায় নদীর প্রত্ন শরীরে প্রত্যাহিক বেদনার ভোরে যে নগর অসভ্য হয়ে যায় যে নগর সন্ধ্যার আগেই ডুবে যায় মাতাল অন্ধকারের অজস্র উৎপাতে সে নগরের দোহাই দিয়ে জীবন পালিয়ে যায় নৃ ইতিাহাসের অন্তিমে-সমগোত্রীয় ইতিহাসের চিতায় কঙ্কাল দূর্বৃত্তের মতো হেসে ওঠে জীবনের জয়গান গাইতে গাইতে ভয়াল এক নিষ্প্রাণ আলিঙ্গনে অবধারিত মৃত্যুর সীমা লঙ্ঘনে ফিরে আসে দরোজায়-ডোমের ছুরির নিচে আত্মসমর্পনের প্রস্তুতি নিয়ে নিঃশেষ করে জীবনযাপনের নাগরিক অধ্যায়
৪.
বিষের প্রপাতে অজস্র পাখি
মৃত দরোজার কাছে এসে ফিরে যায়
প্রবঞ্চিত দুঃসময়
বিষাক্ত চোখ আর প্রাক্তন দুটো হাতে ঘুরপাক খায় মধ্যবর্তি জীবন-জলের যৌনতায় ধ্যনী শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিষের প্রপাতে অজস্র পাখি মৃত দরোজার কাছে এসে ফিরে যায় নির্ভেজাল অভিশাপের প্রতিশ্রুতি ঠোঁটে নিয়ে উড়ে গেছে অন্য কোনো শহরে পতনের অভিধান থেকে সুসজ্জিত শিল্পের খোলস ভাঙা স্মৃতি নিয়ে এ বেলায় চলে গেছে দুপুরের রোদ্দুর আর টুকরো টুকরো সন্ধ্যার আয়ু হারিয়ে যায় মাতাল অভিসারে
জীবন সে তো ধুলোবালি রঙিন মুগ্ধ প্রজাপতি-সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে অযুত আলোকরশ্মির প্রতিফলিত চিৎকার বিশ্বাসের চোরাবালিতে ক্ষত-বিক্ষত এক পোড়ামুখ অনটনের ঘাটে আছড়ে পড়ে অবলীলায় শীতের সম্ভ্রমে খুঁজে পাওয়া উনুনের উত্ত্বাপ হারানো দিন ফিরে আসে-ফিরে আসেনা পথের উত্তরাধিকার ক্লান্ত বিষুবরেখা প্রণিত বিশ্বাসের সংকোচ প্রবঞ্চিত দুঃসময়ের করতলে নিঃসঙ্গ শিকারীর চোখে রাখে অনন্ত সূর্যরেখা অভিশপ্ত কান্নার অধিকার সূর্যের ছায়ার ভিতরে বিষাক্ত চোখ আরো ভয়ঙ্কর হয়ে গিলে খেতে থাকে শরীর সর্বশ্ব ধ্রুপদী জীবন
৫.
বিত্তবৈভবে খুঁজতে থাকি মধ্যবিত্ত সংকট
সম্ভ্রান্ত শহরে জেগে থাকে বধির ভাষ্কর্য
কান্নার কঙ্কাল
ঘুমহীন আয়না ষড়যন্ত্র আর দুঃসময় মুখোমুখি-অসভ্যতার ভিতরে বড্ড বেশি মিথ্যের মতো বেঁচে থাকে স্বতন্ত্র মুদ্রার ক্রীড়া কসরত-প্রতিদিন বীর্যপুঁজ শহরে হণ্যকুকুরের চিৎকারে নেমে আসে রাস্তায় আহা পুঁজির কেরামতি দলবদ্ধ শেয়ালের ডাকে অসহ্য রাত্রি নামে চোখের পাতায়-নিজেকে প্রশ্ন করে রূপালি চাঁদ ফিরে যায় মতিঝিলের আকাশে-ও আকাশ-ও শাশ্বত বিকেলের কান্না-বৈভবের শীতলতা সর্বাঙ্গ ছুঁয়ে রক্তজাত প্রবৃদ্ধি বাড়াতে বাড়াতে ক্লান্ত মুখে কী খুঁজতে থাকো-বুকের ভিতরে অনাদীকালের রক্ষিত কপাট নাকি সদা প্রস্তুত অবাঞ্জিত কালো ঘোড়া সরীসৃপ যন্ত্রণা ধারণ করে কখন যেনো পরিব্রাজক বিত্তবৈভবে খুঁজতে থাকি মধ্যবিত্ত সংকট সম্ভ্রান্ত শহরে জেগে থাকে বধির ভাষ্কর্য আহা কতোটা মিথ্যে সাক্ষি হয়ে বেঁচে আছে ইতিহাসের পাতায় বিস্তৃত ধ্যানে আয়নার ভিতরে প্রতারিত ছায়া হয়ে যাই নিজেকে উচ্ছেদ করতে করতে বহুবার পুর্ণজীবনের গান গেয়ে খুন হতে থাকি দস্যুদের রাস্তায় আমাদের আর ভোর আসেনা কেবলই আয়নার ভিতরে ভেসে আসে দস্যিমুখ-আহত কান্নার কঙ্কাল
৬.
রক্তের ভিতরে ঢুকে গেছে
সেইসব বিশ্বাসের পরগাছা
বেদনার বৈষম্য
শৃঙ্খলিত শোকের দীর্ঘ মিছিল-ক্ষণজন্ম অধিকারের প্রবঞ্চণায় মৃত কাকেরা রেখে গেছে আগুণের প্রসারিত উদগীরণ সমকালীন শোকসভায় নাগরিকের সারিবদ্ধ শ্রদ্ধার পুষ্প্যমাল্য অতিরঞ্জিত বিশ্বাসের বক্রতা ভেঙে মৃতের পাশে পাঠ করে নির্মম জীবনপোখ্যান বৃষ্টির মার্জনায় ভেজামাটি গন্ধ ঋণের পরিহাসে ক্ষতবিক্ষত অসাম্প্রদায়িক জীবন শ্রেণি সচেতন শোকের ভিড়ে মলিন-জন্মের অন্তরালে পাখির ইতিহাস থেকে বেরিয়ে আসে মৃত্যু আর বেদনার বৈষম্য-ইতিহাসের খোলসে ঘুমিয়ে থাকা কালোসাপ অন্তর্গত অভিশাপে রক্তের ভিতরে ঢুকে গেছে সেইসব বিশ্বাসের পরগাছায় বেড়ে ওঠা মানবধিকারের নীতিমালা বহুবিধ অন্ধকারে হেঁটে গেছে
কাকের মৃত চোখে ভেসে ওঠে জাতিসংঘের শরীর-রুক্ষ আর বিশ্রী স্বভাবে অপহৃত রাজনৈতিক অভিসন্দর্ভ ছায়াহীন নিরুপায় জীবন-জীবনের ভিতরে বেড়ে ওঠে গোত্রহীন এক রাজনৈতিক অধিকার
৭.
সূর্যের দিকে ছুঁড়ে ক্ষীণ হতে থাকে
পরম্পরায় বেঁচে থাকা জাতীয় পাঠ্যপুস্তক
সাংঘর্ষিক অভিধান
প্রতিঘাতের স্কুলবাসে ভয়ঙ্কর ক্ষুধা নিয়ে ছুটছে প্রতিবেশি কুকুরগুলো-মর্গ থেকে ছুটে আসা ডোমের শিক্ষালয় ভেঙে প্রতিদিন অজস্র মৃত্যুর উপদ্রব তেড়ে আসে কুকুরগুলোর দিকে মানুষগুলো কুকুর হয়ে গেছে দৈব শিক্ষাক্রমে ভূমি ও জলের তৃষ্ণায় মানুষের উপত্যকায় বেঁচে থাকার দুঃসাহস নিয়ে অসংখ্য অভিসন্দর্ভ চাটতে থাকে তাদের দীর্ঘ জীহ্বা আহা কালাকানুন দ্বৈরথের অধ্যায়ে নির্মিত ভাগ্যলিপি বিগলিত সূর্যের দিকে ছুঁড়ে ক্ষীণ হতে থাকে পরম্পরায় বেঁচে থাকা জাতীয় পাঠ্যপুস্তক
বহির্ভূত অঙ্কের বেদনায় আমাদের দিকে হো হো করে হেসে ওঠে আদিবাসী কান্না ধ্যানী সভ্যতার বীর্যবায়ু মুগ্ধ সংবিধানের পাতায়-নিমজ্জিত চিন্তার ভিতর বহির্গামি আয়ুর কঙ্কালের উৎপাত দেখে মানুষ হারিয়েছে সরূপ যুক্তি ও মেধার উত্তরাধিকার-আজন্ম শৈশবের কান্নায় ভাসতে থাকে পরাজীত দীর্ঘশ্বাস-বহুমুখি অন্ধকারে ডুবে যায় অনাদীকালে ক্ষুধা ও জন্মান্তরের সাংঘর্ষিক অভিধান
৮.
আমাদের চোখ আমাদের বিরুদ্ধে
সম্পুর্ণ ছন্দবদ্ধ মৃত্যু পর্যন্ত জ্বলতে থাকে
যন্ত্রণার ত্রিশূল
প্রতিবেশি ম্লান চোখ প্রতিদিন তাড়িয়ে বেড়ায় শহরের জীবন জীবিকায়-মধ্যবিত্তের টানাপোড়েনে দুপুরের রোদ চাষাবাদ করে মুদ্রারপীঠে বিক্রি হয়ে যাওয়া বিকেলে ঘরে ফেরে ক্লান্তচোখ যন্ত্রণার ত্রিশূলে গেঁথে থাকে মরমী রাত আহা উপনিবেশিক মন ছুটে আসে বেদনার বিছানায় মধ্যরাত পেরিয়ে বিন¤্রভোর পালিয়ে যায় রক্তাক্ত সূর্যের হৃৎপিন্ডে অনন্তকাল আয়ুর আরাধনা প্রতিবেশির নিষ্পেষিত উদ্বিগ্নতা ভীষণ যন্ত্রণায় কাতর থাকে বাহুমূলে ওগো হাওয়া নির্বিচারে ছুঁয়ে যাও সন্ন্যাস সংসার-অনন্ত সূর্যের পোড়াচিহ্নে আমরা খুঁজতে থাকি উত্তরাধিকারের প্রবঞ্চণা সুরক্ষিত স্বপ্নের শ্বাশত প্রার্থনায় অপেক্ষা করি নির্মোহ জীবনের অযুত আয়ু দৈবশাসনে সর্বস্ব হারানো বিগলিত চোখ রাজনৈতিক দূরভিসন্ধি আর অর্থনৈতিক ক্রিয়াকর্মে অন্ধ হয়ে থাকে অগ্নিপিন্ডের আলোক বিচ্ছূরণ চোখের ভিতরে নিবিড় বসবাসে পৃথিবী পোড়াতে থাকে-আমাদের চোখ আমাদের বিরুদ্ধে সম্পুর্ণ ছন্দবদ্ধ মৃত্যু পর্যন্ত জ্বলতে থাকে বিরোধী পক্ষের মতো জোট ভাঙা-ভোট ভাঙা দীর্ঘশ্বাসের ভিতরে আমরা তুমুল নিরপেক্ষ থাকি
৯.
হা-হুতাশের ভিতরে প্রবাহিত ঈর্ষাকাতর দর্শন
ক্রমাগত পালাতে থাকে
বিজ্ঞাপনের অন্তর্বাস
অস্বচ্ছ অভিজ্ঞতায় মৃত্যুর উপত্যকা ভুলে বেনামে গড়ে তোলা চিরন্তন আবাসন প্রকল্প-মানুষের পদদলীত জীবনে সুরক্ষিত শহরের ইশতেহার কান্নার করুণ চোখ বদলের ইতিহাসে চিৎকার দিয়ে ওঠে-ঘুম ভাঙা শরীর বহির্ভূত বিশ্বাসের নির্যাস নিয়ে দেখতে থাকে দুস্যুদের রাস্তায় শুয়ে থাকা বিশুদ্ধ শাস্ত্রের নামাবলি-রোদের স্নেহে বেঁচে থাকা এক প্রখর জীবন ডুবে যাচ্ছে প্রজাতন্ত্রের করতলে দৃষ্টির গহ্বরে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বেড়ে ওঠে আগ্রাসী পোকামাকড় এইসব হা-হুতাশের ভিতরে প্রবাহিত ঈর্ষাকাতর দর্শন ক্রমাগত পালাতে থাকে বিপন্ন অন্ধকারে ক্লান্ত নিঃশ্বাস আর শ্রমের সদাইয়ে প্রতিদিন বেচতে থাকা ঘামের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমাদের সামনে ভেসে ওঠে বিজ্ঞাপনের অন্তর্বাস-পালকের ছায়ায় পথের দূরত্ব মেপে বসবাসের পথ ভুলে যাওয়া সময় বিলবোর্ডের কার্ণিশে ঝুলে থাকে আহা মৃত্যুর কোনো মানচিত্র থাকে না-অন্ধকারের মলিন অধ্যায়ে সক্রিয় ধ্যান-মগ্নতার গ্রাসে সূচীবদ্ধ থাকে জীবনের সরল রেখা সাবলিল অভিজ্ঞ যন্ত্রণা
১০.
যন্ত্রণার মৃত মুখোশ থেকে বের হয়ে আসে
বৈষম্যের আদি খামার
আগুনের অববাহিকা
দীর্ঘ যাত্রায় মুগ্ধ মৃত্তিকার কাছে ছুটে এসে আমরা হারিয়ে ফেলি অভিবাসনের অভিশাপ দিকশূন্য শীতের কান্না আগুনের অববাহিকায় অদৃশ্য হতে হতে দৃষ্টির পরিসীমায় জেগে ওঠে অসংখ্য উৎপাত খোলাবাজারের বিভীষিকাময় স্তদ্ধতা স্নায়ুর ভিতর গড়ে তোলে এক অবিণাশী প্রকল্প-উচ্ছিষ্ট জনতার হাড় থেকে উৎপাদিত শস্যাদির বিপুল ফলন কেঁদেকেটে মরে অন্ধকারে সুরক্ষিত নিলামে-রক্ষিত কপাট ভেঙে বেরিয়ে আসা বাজার পরিস্থিতি ওঁৎপেতে থাকে কালকেউটের মতো আগুনের শরীরে বেড়ে ওঠে ক্ষুদ্ধ অর্থনীতি আমাদের চোখ থেকে অবলীলায় ঝরতে থাকতে উলঙ্গ বেদনার পাণ্ডুলিপি
যন্ত্রণার মৃত মুখোশ থেকে বের হয়ে আসে বৈষম্যের আদি খামার-পরিত্যাক্ত নাগরিকের বিরুদ্ধে জেগে থাকা অজস্র সার্চলাইট উদ্বিগ্ন রাষ্ট্রের করতলে দাঁড়িয়ে থাকে নির্দ্ধিধায়-সারিবদ্ধ সামাজিক অধ্যায়ে অসংখ্য মুখোশের ভিতরে আমাদের মুখ ঢেকে যায়-আমাদের মুখগুলো একেকটি হিংস্রপ্রাণির মুখ হয়ে যায়
১১.
পাপ ও পঙ্কিলতায় ক্রমশ নিজেকে
খেয়ে ফেলছি আভিজাত্যের ভিতরে
সামরিক সামঞ্জস্যতা
নিমজ্জিত ভাষার ক্রোধে ভীষণ ব্যস্ত সুচতুর নগর- রবীন্দ্রনাথের বুকের উপর অসংখ্য মানুষের পা রক্তাক্ত ও নির্মম ভাবে হেঁটে বেড়ায় তিনি জানতেন না এই উত্তরসুরী বিজ্ঞাপনে ঢেকে ফেলা মুখ আর কোনদিন ফেরত চায়নি-আর কোনদিন মুখের ভিতরে গিলে ফেলা শতশত আলোকবর্তিকার রক্তনৃত্য থেকে বের হতে শেখেনি-আর কোনদিন বুকের ভিতরে বিদ্ধস্ত গ্রেণেডের অংক কষেনি নির্দ্ধিধায় ভুলে গেছে চোখের পাতায় ঝলসে যাওয়া আদিম ইতিহাস-ভাষা ও বিজ্ঞানের অগণন যন্ত্রণা-ভুলে গেছে রক্তমাখা দিনের সামরিক সামঞ্জস্যতা
সহনশীল অনুভূতির শল্য চিকিৎসায় ভোটাধিকারের বিস্ময়ে আমাদের হাড়-অস্তি¡-মজ্জা পুড়ে যেতে থাকে নিজের ছায়াও অদৃশ্য অস্পৃশ্য হয়ে সটকে পড়ে পাপ ও পঙ্কিলতায় ক্রমশ নিজেকে খেয়ে ফেলছি আভিজাত্যের ভিতরে প্রতিদিন নিজেকে খেয়ে খেয়ে শ্রেণিসচেতন অনুভূতিতে ভূগছি আর চোখের ভিতরে অগণিত শস্য উৎপাদনে নির্বিকার তাকিয়ে থাকি বিশ্বব্যাংকের কোষাগারে
১২.
অনিশ্চয়তার শ্রেণি বিভাজনে মুখ ও মুখোশের
কোন পার্থক্য থাকে না
অর্থনীতির কলাকৌশল
অতিরঞ্জিত বিশ্বাস আর পরানুভূতিতে স্বল্পদৈর্ঘ্য স্বপ্নের বিপরীতে সুন্দরগুলো বেচতে থাকি-কাঠবাদামের শরীর থেকে বেরিয়ে আসা ঘ্রাণ অল্প আয়ুর দামে নিলামে ওঠে নাগরিক অধ্যায়ে গৌরবময় মৃত্যুর বিরুদ্ধে নিখুঁত প্রলাপে শৃঙ্খলিত জীবন যাপন অধিক নিভৃত-স্বপ্নহীন বাজিকরের মতো আমরা বেজে চলেছি প্রতিঘাতের ভিতরে অসম্ভব প্রতিপক্ষ হয়ে থাকি আত্মপ্রবঞ্চণার-এমন নির্বিচারে নগরপথ মাড়িয়ে নৈরাজ্য ধারণ করি অহিংস মনস্তাত্ত্বিক অভিধানে অনিশ্চয়তার শ্রেণি বিভাজনে মুখ ও মুখোশের কোন পার্থক্য থাকে না-সূর্যের রোদ্দুর শাসানো চোখ থেকে গলে পড়ে গণতান্ত্রিক অভিজ্ঞান-লুণ্ঠিত অর্থনীতির কলাকৌশল
এতো সহজেই রক্তের ধারাপাতে মিশে যেতে চায় জৈবিক তাড়না-উদভ্রান্ত বিনিয়োগ সহসা কেড়ে নেয় সমস্ত সত্ত্বা- নির্ঘুম স্বতন্ত্র পাহারাদারের মতো অন্ধকারে গোলাপের গন্ধ খুঁজতে খুঁজতে হারিয়ে ফেলি সমস্ত রাতের নিঃশ্বাস-শহর জুড়ে বয়ে বেড়ানো এক রক্তাক্ত কঙ্কাল
১৩.
অসংখ্য প্রশ্নের অগ্নিকুন্ডে বেঁচে থাকে
গোধূলিগামি জীবনের শ্বাশ্বত অধ্যায়
নিরুদ্দেশ অন্ধকার
কিছুতেই আর প্রত্যাশা নেই-নিরাকার প্ররোচনায় আমরা হাঁটছি গোধুলির দিকে আশ্চর্য এক লজ্জার দহনে শহর ও সভ্যতা গভীরে ঘুমিয়ে থাকে বহুতান্ত্রিকতার মনস্তাত্ত্বিক দেহাবশেষ শহরের অন্তিম শয্যায় আমরা নির্বিকার চেয়ে থাকি পরষ্পর ভুল অভিশাপে জর্জরিত রাজনৈতিক ইশতেহার থেকে উঠে আসা ভাগ্যচিত্র চোখের ভিতর নিরুদ্দেশ অন্ধকার আর অন্ধকারের ভিতরে হারিয়ে যাওয়া তাতানো সূর্যের অঙ্গীকার ক্রমশঃ ভুলতে থাকি-বুকের ভিতর হারিয়ে যাওয়া গ্রামের গন্ধ নিঃশেষ হতে হতে অসংখ্য প্রশ্নের অগ্নিকুন্ডে বেঁচে থাকে গোধূলিগামি জীবনের শ্বাশ্বত অধ্যায়
জীবনের ভিতরে জেগে থাকে অজস্র উৎপাত-ঘৃণা ও মৃত্যুর অবিরাম টানাপোড়েন বৈষম্যের অপঘাতে ধেয়ে আসে এই উপত্যকায়-কোথায় হারিয়েছি আমার সর্বস্ব ঠিকানা-কোথায় হারিয়েছি দৈবস্বপ্নের পাথর প্রস্তর-আর কোনো প্রত্যাশা থাকে না-স্বপ্নের মিথ্যা প্রাচীরে আজন্ম পাপের প্রতিচিত্র কলঙ্কিত কালের আবির্ভাব থেকে মুক্তি নিয়ে জ্বালিয়ে রাখি অনিবার্য সূর্যের অঙ্কিার-ফিরে আসবার অবিরত প্রতিশ্রুতি
১৪.
দূরারোগ্য স্বপ্নের প্রত্নভূমিতে লুটে পড়া
চুম্বন থেকে আমরা বাঁচতে পারিনা
মৃত্যুমুখি শ্লোগান
সেইসব হাঙ্গর নগর ভবন জুড়ে বর্জ্যবিষে লোমহর্ষক কীর্তিকলাপে পরিপুর্ণ-অবিরত দালালের দৌরাত্ম্যে মৃতদের চোখে বেরিয়ে আসে কাল্পনিক অভিধান-অদৃশ্য শয়তানের হাতে নির্মিত কসাইখানায় নিঃশব্দে জবাই হয় একেকটি দস্যু-সহোদরার মতো আমরা দেখতে থাকি রক্তজবার মৃত্যুমুখি শ্লোগান আমরা জনকের মতো দৃঢ়চিত্তে অনুভব করি সূর্যের হৃৎপিন্ড ছিড়ে কিভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে রক্তগোলাপের কঙ্কাল-একেকটি অস্পৃশ্য মৃতরা বাংলা একাডেমির কানে কষে থাপ্পড় মারতে মারতে মাটিতে নামিয়ে আনে-একেকটি মৃতরা বইয়ের পাতা থেকে বেরিয়ে এসে রাজপথে দাঁড়িয়ে খুঁজতে থাকে হত্যাকারীর কালোচোখ-চাপাতির পূর্ব ইতিহাস
মাঝরাতে তাড়িয়ে বেড়ানো ঈগলের চোখে আমাদের বঞ্চিত হাহাকার দূরারোগ্য স্বপ্নের প্রত্নভূমিতে লুটে পড়া চুম্বন থেকে আমরা বাঁচতে পারিনা নগরালয়ের শাসনলিপিতে একে একে খুন হয়ে যায় পরিব্রাজক ফানুশের আয়ুষ্কাল-জ্বলন্ত সূর্যের ছায়ার ভিতরে নগ্ন ইঁদুরের বসবাসে আমাদের মলিন জীবন নির্বিকার মুখোমুখি এক অদৃশ্য শয়তানের
ロ শাফি সমুদ্র
ロ শাফি সমুদ্র