রাজনীতি: মৃত্যুর ইশতেহার
অজস্রবার খুন হতে হতে মিতব্যায়ি বিকেল শরীরের ভেতর জ্ঞানবিজ্ঞানের উপকথায়- সংকীর্ণ আলোয় ফিরে যায় ঘুমের সঞ্চিত অভিধানে- নিহত সন্ধ্যায় দাঁড়িয়ে জীববৈচিত্রের সমগ্র কান্নায় অন্ধ দেয়াল বুকের ভেতরে লিখে রাখে আসন্ন মৃত্যুর ইশতেহার- মৃত্যুমুখি দিন আগ্নেয়োৎপাতের গভীর বেদনায় উড়তে থাকে নিঃসঙ্গ আকাশের দিকে- মৃত্যু তাকে নিয়ে গেছে ইতিহাসের গভীর জজ্ঞালে- রাজনীতি আর কাদাজল সমস্ত শরীরে মেখে কখন যেনো হয়ে গেছে চৌরাস্তার ভাস্কর্য
কৃতদাস: অভুক্ত অন্ধকারের শরীর
দস্যূদের রাস্তা শুয়ে আছে আগুনের আদিম সন্তান-গণতন্ত্রের ঢাকঢোলে বেঁচে থাকা ঈগলের ডানায় নিরাপদ ঘুমিয়ে থাকে জীবন- আহা কী আনন্দ বাতাসের অভিজাত মেজাজে বিলাসী বাসনা মধ্যরাতের রাস্তায় বেনামী হয়ে যায়- নর্তকীনগরে বিশ্বাসের হরিতকি দস্যূদলের কৃতদাস হয়ে বেচে দেয় শুষ্ক শীতের শরীর
মধ্যরাত নিরপেক্ষতার প্রশ্নে নিজেকে খ-বিখ- করে প্রতিপক্ষের দরোজায় ভীষণ খুঁজতে থাকে অভুক্ত অন্ধকারের শরীর- অসংখ্য ইঁদুরের জীবন খুব অসহ্য হয়ে ওঠে স্বাস্থ্য মন্ত্রীর টেবিলে
পানিচুক্তি: নির্মম বিধিমালা
দলবদ্ধ রাজহাঁস রাজনীতি বোঝেনা শামুক-ঝিনুকের গভীর বেদনায় ভাঁজ হয়ে আসা ক্ষুধার্ত ঘ্রাণ সাঁতরাতে থাকে নদী বুকে- নদীর সংসার ভাঙা জীবন খুব ছোট হতে হতে বৈশাখ মাসে রবীবাবুর পদ্য হয়ে ওঠে আর রাজহাঁস রাষ্ট্রিয় বিধিমালায় পরাজীত হতে হতে একদিন হারিয়ে ফেলে তার গৃহত্যাগী গোত্রের আহার
ওগো হাঁস আমার- অরাজনৈতিক হাঁস তোমার অন্ন কেড়ে নিয়েছে ভারতমাতা- তোমার ভেসে চলা নদীর বুকে ছুরি বসিয়েছি পানিচুক্তির নির্মম বিধিমালা
ইশতেহার: জনশ্রুতির শেষ শ্লোগান
আগুন চিরোকালই চরিত্রহীন বিপদ আপদ না বোঝা সর্বনাশ কান্ডজ্ঞানহীন উত্তাপে পোড়াতে থাকে মৃত্তিকার নিঃশ্বাস- জনশ্রুতির শেষ শ্লোগানে উড়ে যায় দাবীদাওয়ার সমস্ত ইশতেহার আগুন-আগুনের ভেতরেই প্রতারক হয়ে যায়- শরীরের পতন শেষে প্রাচীন ছাইভষ্মের স্মৃতিতে গোত্রভাঙার শঙ্খধ্বনী বাজাতে বাজাতে কখন যেনো দীর্ঘপথে হারিয়ে যায়
আগুনের আয়ুষ্কাল জেনে সংসদ অভিনেতারা খুব যত্নে সূর্যের অঙ্গীকার ভুলে যায়- পাথরের পরাজীত প্রার্থনায় আশ্রয়হীন আগুন সন্ন্যাসী পুড়তে পুড়তে খিস্তি গেয়ে ওঠে সংসদ অধিবেশনে
অভিসম্পাত: অনুচ্চারিত রাতের শরীর
এতো অসংখ্য ভুল অবাঞ্চিত ছায়া ঘিরে এতো হৈ হুল্লোড়- ভীষণ সংষ্কার নিয়ে আগুনপাখিরা রেখে যায় অনুচ্চারিত রাতের শরীর অযাচিত ক্ষরণে একেকটি মুহূর্ত ফিরে যায় কঙ্কালের আদিমে- ভয়ঙ্কর সাপের খোলস ছেড়ে একদিন হত্যাকারীর মুখোশ প্রোরোচিত পেন্সিলে আঁকতে আঁকতে নিজের মুখাবয়ব খুব বেশি মনেপড়ে- একেকটি খুনের ভেতরে নিজেকে নির্মাণ করি অবাঞ্চিতদের অধিকারে- অনিবার্য অভিসম্পাতে নিজেকেও প্রতিদিন খুন করতে করতে আগুনের সন্তান হয়ে যাই আর অর্থনৈতিক উৎপাতের ভেতরে ক্রমাগত ঋণগ্রস্থ হতে থাকি
রক্তগোলাপ: ঈগলের তদন্তমুখি ডানা
বিচূর্ণ রাতে বারুদ জ্বলে জ্বলে রাজদূতের মতো কুলীন কামনা সর্বাঙ্গ ছুয়ে যেতে কী অস্থির হয়ে ওঠে মিত্রমুখি সারমেয়- প্রতিটি বাসনার সংযম শীৎকারে কাঁপতে থাকে সেনাসদরে ফুঁটে থাকা রক্তগোলাপ- আগুনের দীর্ঘ নিদ্রা সমুদ্র সন্তানের নির্মোহ অভিশাপে ক্ষুধার্ত জ্ঞান অন্ধকার মেপে মেপে নগ্নদেহ জুড়ে ছড়িয়ে রাখে বীর্যচিহ্ন-পাশবিক ব্যাভিচারের চিত্রকর্ম
রক্তগোলাপ জানে সৈন্যসামন্তের কামনার তীব্রতা কতোটুকু মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘরে ফিরে সুনশান নিরাবতার প্রশ্রয়ে নিরাপদ থাকে- অস্তিত্ব রক্তঘুমের আবাদে কতোটা অভিজ্ঞ আমাদের সদরদপ্তর- তা কেবল জানে তনুর মৃত আত্মা আর ঘুমিয়ে থাকা ঈগলের তদন্তমুখি ডানা
অঙ্গীকারনামা: একেকটি নির্ভেজাল মৃত্যু
রাক্ষসের মতো সব সুন্দরগুলো চলে যাচ্ছে বিশ্বাস ভাঙা নেকড়ে জীবন ছেড়ে- প্রজাপতির ডানা থেকে খসে পড়া রক্তমুখি কিশোরীর কান্না সূর্যের হৃৎপি- ছিড়ে অনিবার্য ক্রোধে মানচিত্র পোড়াতে থাকে- পুড়ে যায় সবুজ সকাল থরথর কেঁপে ওঠা আন্তর্জাতিক সীমারেখা- অস্ত্রধারী বন্ধু আমার- শান্তির কপোত উড়িয়ে নিখুঁত শিকারীর পোষাকে তুমি আরো বিশ্বস্ত খুনি হয়ে ওঠো- তোমার পোষাকে আমিষের ঘ্রাণ সজ্ঞান পাহারাদারের মতো নগ্ন হয়ে থাকে
তুমি ভুলে যাও পোষাকের অঙ্গীকারনামা- অস্ত্র তাক করা বাহুর বিশ্বাসে দুর্গম ঘাসের ভেতরে কী শিকার করো মানুষের মতো হবুহু মানুষের মতো প্রাণ ফুটফুটে জীবন
অনাদরে বেঁচে থাকার চেয়ে ঢের ভালো মৃত্যু- তোমার নিশানা ভুল করেনা ঠিকঠাক চিনে নেয় লক্ষ্যবস্তু রক্ত অনুষঙ্গ- ডুবন্ত সূর্যের নিচে ভয়াল চকচকে উদ্ধত রাইফেল কাটাতার ভেদ করা একেকটি নির্ভেজাল মৃত্যু
কালকেউটে: নগরায়নের ভিত্তি প্রস্তর কিংবা আগুনের প্রতিচিৎকার
পাখিরাও বেমালুম ভুলে যায় সূর্যের রেখে যাওয়া চিহ্ন- অতি উত্তপ্ত আলোকরশ্মি পোড়াতে থাকে মসৃণ পালক আর পাখিদের চিৎকারে থমকে যায় সচল সজ্ঞান জনসভা- গুপ্ত বায়ু থেকে বেরিয়ে আসা সাপের ভাষায় জননেতার ভাষণে অগণিত জনতার হৃৎপিন্ড শীতল হয়ে আসে ক্রমাগত শীতের ভেতরে- মানুষের শিরা-উপশিরায় ঢুকে পড়ে একেকটি কালকেউটে একদিন মানুষেরাও বিষ ছড়াতে থাকে ঘরে-বারান্দায়-উঠোনে
মানুষ কবে জেনেছে বিষের ভেতরে উৎপন্ন বিশ্বাস মানুষ বেশিই ভালোবাসে- পাতার নিখুঁত শব্দ থেকে প্রিয় বিশ্বাসের অকাল মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায় আগুনের আশ্রমে- আগুনের প্রতিচিৎকার পাখির ভাষা কেড়ে নিয়ে স্বেচ্ছাচারি মৃত্তিকায় কখন যেনো ফেলে রাখে নগরায়নের ভিত্তিপ্রস্তর
সাঁওতাল: স্বর্গলোকে চলে যাওয়া নিরাপরাধ জীবন
আগুনেরা আত্মগোপনে যেতে যেতে শীতের দীর্ঘপথে ছড়িয়ে যায় একেকটি ঝলসে যাওয়া মুখ- অনাদির অপেক্ষায় বহুদূর অবধি দুঃস্বপ্নে বিভোর- আগুনের পুত্ররা সাঁওতাল পথ ভাঙে বুকের পাটাতনে আর সাঁওতাল মেয়ে অধিকারের ভূমিতে রক্তের চাষে ছড়িয়ে দেয় বীজমন্ত্র- আহা জন্মের জমিতে বহুদিন আগুনের প্রবল প্রতাপ আক্রোশে হেসে উঠে রক্তচোখে- প্রবাহিত বেনিয়া বেজাতের মতো গিলে খায় নিরীহ গ্রাম নিরাপরাধ জীবন
সাঁওতাল জীবন মানে কি দস্যূদলের মাড়িয়ে যাওয়া রক্তাক্ত পথের ধূলো- সাঁওতাল জীবন মানে কি তোমার কাছে আমার নির্বিঘ্নে হেরে যাওয়া ভিটেমাটি- সাঁওতাল জীবন মানে কি অগণন যন্ত্রণার ভেতর হেঁটে হেঁটে স্বর্গলোকে চলে যাওয়া...
অর্থনীতি: অবিকল বিশ্বব্যাংকের শিশ্ন
মৃত্যুর মতো খুব গোপনে হানা দেয় সমস্ত স্পর্ধা- পাপের প্রাচীর ভেঙে বুনোশুয়োরগন ঘোৎঘোৎ করে ছুটে আসে মতিঝিলে- দ্রারিদ্রতার নিন্মচাপে বনেদী আহার খুঁজে বেড়ানো সরীসৃপেরা ভাগ্যবদলের ইতিহাসে মিশে যায় সাপের দলে- কালকেউটের খোলস থেকে বেরিয়ে আসা চকচকে একজোড়া চোখ রক্তের ভেতর মিশে থাকা বহিরাগত অন্ধকারে নিমজ্জিত- ক্রমাগত নিঃশ্বাসে জীবনের নিচে থেতলে যাচ্ছে মধ্যবিত্ত জীবন
জীবনের কোনো মানে থাকে না অবাধ খোলা মরীচা ধরা স্বপ্নের ভেতর ধান ক্ষেতের সরল কান্না অবিকল বিশ্বব্যাংকের শিশ্নের ভেতর থেকে বেরিয়ে পড়ে অর্থনীতির ক্রিয়াকর্ম- ঋণগ্রস্ত ভূমিতে ফুলে-ফেঁপে ওঠা উদ্বৃত্ত খাদ্য উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ
বিজ্ঞাপন: ঘাসের শব্দহীন ক্রন্দন
শুয়োরের মতো কালোঘন কিটকিটে মানুষগুলো নেহাতই যুদ্ধের প্রিয়পুত্র- উত্তরাধিকার ভুলে যাওয়া রক্তরঙের ঘাসগুলি শব্দহীন ক্রন্দনে মানুষের পায়ের কাছে নতজানু- রাস্তার উপর ঘুমানো কুকুরের অসৎ আয়ু প্রতারিত বিজ্ঞাপনে আদালত আদালত বলে চিৎকার দিতে দিতে মানুষেরই পায়ের কাছে ঝিমাতে থাকে- মানুষের পা কেবল দখলের ভাষা বোঝে- মানুষের পা কেবল মানুষের বুকের উপর দিয়েই নির্বিঘ্নে হেঁটে যায়- মানুষের পা শরীরের অধিক দীর্ঘ হয়ে যায়
রাষ্ট্রসংঘ: অন্তর্ঘাতি অসহায় প্রলাপ
আর কোনদিন পৃথিবী পরিবর্তিত হবে না- এখানে স্থির আর স্থিরতার বিনিময়ে রক্তের প্রবাহ চিরকালীন স্তব্ধ কুলীন অন্ধকারে হেঁটে যাবে- অচ্ছুত দুরভিসন্ধির শরীর ভেঙে টুকরো টুকরো রোদ গণতন্ত্র বিদ্বেষী মলিন মুখে রাজদন্ডের দোহাই দিয়ে এগুতে থাকবে রাষ্ট্রসংঘের দিকে- স্বল্পদৈর্ঘ্য হাতের নির্ভুল নিশানা কখনো ভুল করে না সংঘবদ্ধ রাষ্ট্রিয় কৃতিকলাপ যুদ্ধের পরিস্থিতি বাণিজ্যকলায় অজস্র গোলাবারুদ হত্যাযজ্ঞের নিশ্চয়তায় কেঁদে ওঠে
আহা কী সংঘাতে কী নিষ্ঠুরতা বিরোধী শ্লোগান অন্তর্ঘাতি অসহায় প্রলাপ করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে রাষ্ট্রসংঘের সংবিধানে
শ্লোগান: শ্লোগানমুখর হাতগুলো অদৃশ্য হয়ে যায়
মানুষ কখনো কখনো নির্বোধ প্রাণীর বেশভূষায় চাকচিক্য আর নবায়নযোগ্য হয়ে ওঠে- তখন মানুষের ভেতরে হারিয়ে যেতে থাকে শ্লোগানমুখর মশালমিছিল দাবিদাওয়ার নানান নিষ্পত্তি- মানুষের সমাজে মানুষ অন্যকিছু হয়ে যায় কখনো কখনো মরাণাস্ত্র হতে হতে কখনো কখনো ঝলসানো মুখের মতো কখনো কখনো পরাধীনতার যন্ত্রণা কাঁধে নিয়ে খাঁচাবন্দি হয়ে যায় মানুষ ও তার সত্তা মানুষগুলো নিজের ছায়ায় অদৃশ্য হয়ে যায় এভাবেই
মানুষেরা: উপতক্যার ইতিহাসের বিষ্ময়
মানুষের পরিধিতে মানুষের বিচরণ থাকে না- মানুষগুলো গুপ্ত বৃষ্টির ভেতরে প্রাণ নিয়ে বেঁচে থাকে মানুষগুলো ধর্মান্ধনুভূতিতে ভূগতে ভূগতে পাঁজর ভেঙে বনসাই জীবন আর রক্তের গহীনে বসবাস করতে থাকে- টুকরো টুকরো হতে থাকা উপতক্যার ইতিহাস পাড়ি দিয়ে আগুনের শরীরে নিজেকে মেলে ধরে অজস্র স্মৃতির পলিমাটিতে- লুকিয়ে থাকা বৃষ্টির নির্ভেজাল কান্না একদিন মানুষের বুকেই খুন হয়ে যায় মানুষ