লিটলম্যাগের লেখকেরা কি সাবেক হয়?আমি ঠিক জানিনা। অথচ-আমরা বিশ্বাস করতে চেয়েছিলাম লিটলম্যাগ মুভমেন্ট এমন এক পরম্পরা যা যুগ যুগ ধরে চলমান থাকবে। কিন্ত আমরা লক্ষ্য করছি এ পরম্পরার মস্তকধারীরা ক্রমশ ধোঁয়াশার ভেতরে নিজেকে হারিয়ে ফেলছেন এবং ফেলেছেন কেউ কেউ আর নতুনেরা সেটা বয়ে বেড়াচ্ছে। তাতে আমাদের ঘাড়ের বোঝা আরো বেশি ভারি হলো।
হ্যাঁ
সেলিম মোরশেদ ভাইকে ব্যক্তিগতভাবে আমি প্রচণ্ড শ্রদ্ধা
করি তার লেখার পাঠকও
বৈকি! তার স্নেহধন্যও বটে।
সম্প্রতি মৃদঙ্গ সাহিত্য সম্মাননা নিয়ে যে হৈছৈ
তার বিষয় নিয়ে আমাদের
ভাবনাটাও প্রকাশ করা জরুরি। প্রতিশিল্প
সম্পাদক মারুফুল আলম এর বক্তব্যের
রেশ ধরে তিনি একটি
কথা বলেছেন ‘‘‘পালটা কথার সূত্রমুখ’ এর
বিপরীতে আরেকটা ইশতেহার লিখে, লিটলম্যাগের নতুন আদর্শ নিয়ে
এগিয়ে যাবে— যে লিটলম্যাগ তাদের
একান্তই।’’ কথাটা আমাদেরকে নতুন করে ভাবায়
যে তাহলে কি পাল্টাকথার সূত্রমুখকে
অতিক্রম করার সময় এসেছে?
আমি মনে করি অবশ্যই
এসেছে এবং কথাসাহিত্যিক সেলিম
মোরশেদ ভাইকে স্পষ্টভাবে জানাতে চাই লিটলম্যাগের আরেকটি
ইশতেহার আমরা তৈরি করবো
এবং সে দায়িত্ব আমি
নিজেই ঘাড়ে নিবো প্রয়োজনে।
কেননা ‘পাল্টাকথার সূত্রমুখের’ বয়ান থেকে যখন
তিনি স্ববিরোধিতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন তখন
আমরা পাল্টাকথার পাল্টাসূত্র খুঁজে বেরা করার জন্য
উদগ্রীব হয়ে পড়ি।
সেলিম
মোরশেদ যখন অনিকেত শামীম
কর্তৃক প্রদত্ত ‘লোক সম্মাননা’ গ্রহণ
করেছিলেন তখনো তার উপর
চাপ ছিলো। এটাকে আমরা স্বাভাবিক ভাবে
নিতে পারিনি, নেবার কথাও নয়। তদুপরি
সমগ্রবাদী ইশতেহারের কবি শোয়েব শাদাবের
প্রতি দায়ে তিনি সেটা
গ্রহণ করেছিলেন বলে বহুল প্রচারিত।
আমরা সেই ইস্যুটাকে আর
বাড়াতে চায়নি। অন্তত দায় তো মিটলো।
কিন্তু তিনি যখন একই
ঘটনার ভিন্নরূপে নিজেকে মেলে ধরলেন নিজের
সীমানা অনির্দিষ্টে নিয়ে গেলেন অর্থাৎ
‘মৃদঙ্গের’ লালসালু গায়ে জড়ালেন তখন
আমাদের পুনর্বার ভাবতে হচ্ছে। এখানে তাহলে কিসের দায়? মোহ? খ্যাতি?
নিঃশেষ হয়ে যাওয়া? নিজেকে
অনির্দিষ্টে নিয়ে যাওয়া? সামনে
কি আরো বড় কোন
পুরষ্কার এর হাতছানি? যদিও
সবগুলো তিনি গ্রহণ করার
অধিকার রাখেন। এই অধিকারের জায়গায়
আমাদের বলার কিছু থাকে
না। তবে আমাদের চিন্তাও
ভিন্নকিছু খুঁজতে থাকে- একটা দশকের এ
কেমন নির্মম পরাজয়? গোটা ৮০দশক মুখ
থুবড়ে পড়ে গেলো আমাদের
সামনে? তিনি
আরো বলেছেন ‘আমি পুরষ্কারে বিশ্বাসী
না, মানুষের নির্মল ভালোবাসা নিতে পছন্দ করি—
সেটা ঘরে হোক কিংবা
স্টেজে।’ পুরষ্কার ছাড়াও কি সেলিম মোরশেদ
কম ভালোবাসার মানুষ ছিলেন? তাকে এবং তার
সাহিত্যকে ভালোবাসার পাঠকশ্রেণিতে কম ছিলো না
বরং ক্রমাগত বেড়েছে। নিভৃতচারী হলেও তাঁর ধ্রুপদী
সাহিত্যের এতো পাঠক আছে
এ ব্যাপারে আমাদের কিন্তু যথেষ্ট ধারণা ছিলো। তবে কি ভালোবাসার
নামে পুরষ্কারের পদতলে পিষ্ঠ হতে হয়? এরকম
অজস্র প্রশ্ন ইতিহাসের পাতায় বেড়ে উঠবে।
নকশাল
বিদ্রোহ ও ভারতের কমিউনিস্ট
পার্টিগুলির আভ্যন্তরীণ ভাঙ্গন বিষয়ে দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় গল্প 'শোকমিছিল' এক মর্মস্পর্শী আখ্যান
পেশ করে সেই সময়ের
দলিল হিসেবে। শুধু তাই নয়
দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপধ্যায় বাংলাদেশ
সহায়ক শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের জন্যে অর্থ সংগ্রহ ও
তহবিল গঠন করার কাজে
ভূমিকা নিয়েছিলেন। এই বাম কমিউনিস্ট
তার উপন্যাস ও ছোটগল্প ছাড়াও
রিপোর্টাজগুলি উন্নতমানের সাহিত্য হিসেবে বিবেচিত হয় বাঙালি পাঠকমহলে।
সুতারং তার সৃষ্টিকর্মকে একেবারে
গুরুত্বহীন ভাবা ধৃষ্টতা বৈ
কিছু নয়। আমার মনে
হয় প্রতিশিল্প সম্পাদক সেই ধৃষ্টতা দেখাতে
যাননি। “সম্মাননা গ্রহণ করে ধন্যবাদ জ্ঞাপনপর্বে
সেলিম মোরশেদ জানালেন— কবি ও ‘মৃদঙ্গ’
সম্পাদক কামরুল বাহার আরিফকে সেদিন সকালে প্রথম দেখে তাঁর অনুভূতি—
দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে মনে পড়ে যাওয়ার
কথা।” এর প্রেক্ষিতে প্রতিশিল্প
সম্পাদক মারুফুল আলম বলেছেন- ‘তবে
দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় কে মনে পড়ার
কোন কারণ দেখি না।’
আমিও সেটা মনে করি
কেননা- মৃদঙ্গ সম্পাদক কামরুল বাহার আরিফ কি সেই
মাপের কোনো এক্টিভিস্ট সেলিম
ভাই? যোজন যোজন তফাৎ
কি নেই? এই ঠুনকো
বিষয় নিয়ে একেবারেই লিটলম্যাগাজিন
বা প্রতিশিল্প থেকে নিজেকে গুটিয়ে
নেবার মতো অবস্থা সত্যিই
হতাশ করে। আর ঘোটপাকাপাকিকে
আমরা দারুণ গুরুত্ব দিই এটা প্রতিষ্ঠানবিরোধি
মুভমেন্টের শুরু থেকে আপনারা
বয়ে নিয়ে এসে শিল্পের
পর্যায়ে নিয়ে গেছেন এবং
আমরা যথেষ্ঠ উপভোগ করি। এতে দোষের
কিছু দেখি না। বরং
আপনিই তো চেয়েছিলেন একটা
হারমোনি তৈরি
হোক এসবের ভেতর দিয়ে। এবং
সেই দিক থেকে আপনার
ভূমিকাও দারুণ ছিলো। আমরা ক্রমশ আশাবাদী
হয়ে উঠেছিলাম। তখনই আবার আমরা
অস্তিত্ব শূন্য হয়ে পড়ি যখন
আপনি বলেন- ‘আগে লিটলম্যাগ মূলত
লেখক তৈরির ক্ষেত্রে সহায়ক হতো, এখন সম্মাননা
প্রদানের পাশাপাশি লিটলম্যাগকে মনযোগী পাঠক তৈরী করতে
হবে।‘ লিটলম্যাগাজিন কি সম্মাননার জন্য
অপেক্ষা করে? পাল্টাকথার সূত্রমুখের
১৪-১৫ নং আয়াতের
সরাসরি সাংঘর্ষিক নয়? আমি ঠিক
জানিনা প্রতিশিল্প কি সেই ‘সম্মানিত’
হবার আকাঙ্খ্যা থেকে বঞ্চিত হয়েছে
কি-না?
শুভঙ্কর
দাশ দা যখন বলেন-
‘কে কাকে গ্রুম করে?’
তখন আমি মনে করি
মুভমেন্টে গ্রুমিং এর প্রয়োজনীয়তা আছে।
যেটা ৪০ বছর ধরে
সেলিম ভাই করে এসেছিলেন।
এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।
প্রতিশিল্প শুধূ নয় অনেক
ছোটকাগজ ও ছোটকাগজের প্রকাশনায়ও
তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকলেও ৪০ বছর পর
সেটা আর তিনি ধরে
রাখতে পারেননি। একজন লেখক ৪০
বছর ধরে লেখালেখি করবে
না গ্রুমিং করবে এটা বড়
প্রশ্ন।