অসমতার সমকোণ, মহিষদলের রূপরেখা ও ঘোড়ারোগের অন্যান্য আমলনামা - শাফি সমুদ্র

সর্বশেষ লেখা

Home Top Ad

প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা কোনো ফ্যাশেনবল বিষয় নয়, যা দিয়ে আপনি নিজের পাছায় একটা সীলমোহর লাগিয়ে ঘুরে বেড়াবেন...

রবিবার, ৫ এপ্রিল, ২০২০

অসমতার সমকোণ, মহিষদলের রূপরেখা ও ঘোড়ারোগের অন্যান্য আমলনামা

আমাদের কখনো উদ্বিগ্নতা নেই, সত্ত্বাকে নিস্ক্রিয় রেখে অযাচিত কোনো দৌড়ে পারতপক্ষে এগিয়ে নেই। মহিষের উৎপাদন ক্ষমতার বৃদ্ধির লক্ষ্য মাত্র নেই বলে চৈত্রের দাবানলে শীতল ছায়ার আবরণে মুড়ে থাকি। মানুষের কোথাও যাবার থাকে কি? মানুষ কি মানুষের রক্তের ভেতরে ঢুকিয়ে রাখে সাপের বিষ? আগুনের কুণ্ডলী পাকিয়ে যে ধোঁয়া উড়তে থাকে, উড়ে যায় মেঘের দিকে, আকাশের দিকে বাড়ি ফিরিবার পথ নাহি খুঁজে পায় তাহাকে কি বলিবো! উত্তর দিকে ধাবমান বায়ুর প্রলাপে ক্রমশঃ উচ্ছেদ হতে থাকে অন্তঃজ আয়ুর শেকড়বাকড়। রাজনৈতিক, রাষ্ট্রিয় আর অর্থনীতির ঘোড়াগুলির উচ্চাকাক্সক্ষার নিচে চাপা পড়তে পড়তে যেসব শিল্পকলকারখানার শ্রমিকেরা মৃত্যুর এক অভিসম্পাত কাঁধে নিয়ে নির্বিচারে ঢুকে পড়ে যন্ত্রণাদগ্ধ শহরের হৃৎপি-ে, তখন বলা শ্রেয় যে এইসব মেলেচ্ছো জীবনের কোনো মানে থাকে না।

জীবনের যখন কোনো মানে থাকে না, তখন সে জীবন মানুষেরও নয়, প্রাণীরও নয় কিংবা উদ্ভিদেরও নয়। প্রকৃতপক্ষে প্রাণের জীবনচক্রের ভেতর যখন বীজগণিত ঢুকে পড়ে অবলীলায় তখন জীবন থেকে বীজ গণিতের শরীর অবলোকন করতে থাকি। না থাক, এতো জটিল বিষয়ে না জড়িয়ে জীবনের মানে খুঁজতে না গিয়ে জ্যামিতির মতো সরল সমাধানের অংক কষতে থাকি।

পিথাগোরাসের উপপাদ্য

পিথাগোরাসের উপপাদ্য: কোনো সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজের ওপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল অপর দুই বাহুর ওপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্রদ্বয়ের ক্ষেত্রফলের সমষ্টির সমান ।
ধরা যাক ABCABC একটি সমকোণী ত্রিভুজ যার ∠A∠A সমকোণ।

প্রমাণ করতে হবে BC2=AB2+AC2BC2=AB2+AC2


অঙ্কন : সমকৌনিক বিন্দু A থেকে অতিভুজ BC এর উপরে অউ লম্ব অঙ্কন করা হল যা BC বাহুকে D বিন্দুতে ছেদ করে ।
প্রমাণ : সমকোণী ত্রিভুজ ABC এর অতিভুজ BC এর উপরে AD লম্ব ।
অতএব ত্রিভুজ ABD ও ত্রিভুজ ABC সদৃশ্য
সুতরাং ABBC=BDAB⇒AB2=BD⋅BCABBC=BDAB⇒AB2=BD⋅BC ......(i)
আবার ত্রিভুজ CAD ও ত্রিভুজ CBA সদৃশ্য
সুতরাং ACBC=DCAC⇒AC2=BC⋅DCACBC=DCAC⇒AC2=BC⋅DC.............(ii)
এখন (i) + (ii) করে পাই
AB2+AC2=BD⋅BC+BC⋅DC=BC⋅(BD+DC)=BC⋅BC=BC2AB2+AC2=BD⋅BC+BC⋅DC=BC⋅(BD+DC)=BC⋅BC=BC2

অতএব প্রমাণিত BC2=AB2+AC2BC2=AB2+AC2

আজ থেকে অনেক পূর্বে (প্রায় ৮০০ BC) একজন প্রাচীন ভারতীয় গণিতজ্ঞ বৌদ্ধায়ন পিথাগোরাসের উপপাদ্যটিকে নিন্মরূপে বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন একটি আয়তকার চিত্রের কর্ণের উপর বর্গক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল উহার উভয় বাহুর উপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্রের ক্ষেত্রফলের সমষ্টির সমান।

যে জীবন দান করে মাটি হতে চেয়েছিলো, যে মেয়েটি ক্যান্টনমেন্টে জমা রেখেছিলো লজ্জা, যে শ্রমিক ধ্বসে পড়া বিল্ডিং এর নিচে দাবার গুটি নাড়ছিলো, যে পিতা পুলিশের টেবিলের উপরে ঝুলে থেকে আকাশের তারা গুনছিলো, যে মানুষেরদল পেট্রোলবোমার বিচ্ছুরিত আগুনের পুড়তে পুড়তে হো হো করে হেসে উঠেছিলো তাদের কোনো কোণই সমকোণ নয়, তাদের কোন বাহুই সমবাহু ছিলোনা। জনাব পিথাগোরাস সাহেব কখনোই দূর্ভেদ্য উপপাদ্যের সমীকরণ মেলাতে পারেন নি বলে যে ধারনা জন্মেছে সে ধারনা থেকে আমরা নিজেদেরকে মুক্ত করতে পারিনি।

মৃত্যু পরবর্তি যখন মহিষদল গরু হয়ে যায়

ঢাকা সিটি কর্পোরেশন প্রতিটি উৎসবের আগে গরুর মাংস নির্ধারণ করে থেকে কেজি প্রতি ৪৭৫ টাকা আর মহিষের মাংস কেজি প্রতি ৪৪০ টাকা। অর্থ্যাৎ প্রতি কেজির পার্থক্য ৩৫টাকা। এই ৩৫টাকার পার্থক্যে মৃত মহিষগুলো রাতারাতি গরুতে পরিণত হয়ে যায়। পার্থক্য বিভাজনের সক্ষমতা না থাকায় রাষ্ট্রের কাছে মানুষের যে জীবন বিক্রি হয়ে যায় তা প্রচলতি নানান পণ্যমূল্যের মানের সমান। কোন কোন ক্ষেত্রে পণ্যের ওঠানামা দামদরের মতো পড়তে থাকে মানুষের জীবনের মান। মূলত মানুষগুলো তখন আর মানুষ থাকে না।

মানুষগুলো পাথর হয়ে যাচ্ছে
মানুষগুলো জল হয়ে যাচ্ছে
মানুষগুলো ধুলিকণা হয়ে যাচ্ছে
মানুষগুলো কসাইখানার ছুরি হয়ে যাচ্ছে
মানুষগুলো জ্বলন্ত কয়লার উত্ত্বাপ হয়ে যাচ্ছে
মানুষগুলো ধীরে ধীরে অন্যকিছু হয়ে যাচ্ছে

তাহলে রাষ্ট্রে কি থাকছে? নগর প্রশাসন কিসের উপরে ঝুলে আছে আছে, শিল্পকারখানা কি উৎপাদন করছে? পুঁজিতন্ত্র কাদের জন্য রূপ বদলাচ্ছে? এসব অহেতুক প্রশ্ন থেকে ১০০ হাত দূরে থাকুন। অযথা প্রশ্ন করবেন না। কোন প্রশ্নে কারোর কিচ্ছু যায় আসে না। এসব প্রশ্নের কোন উত্তরেরও দরকার হয় না। উত্তরটাই বা কে দিবে কিংবা প্রশ্নটাও কোথায় রাখা হবে? এসব প্রশ্ন কোন সংসদেও উত্থাপিত হয়তো হবে না। স্বয়ং ঈশ্বরই সকল প্রশ্নের উর্দ্ধে থাকতে ভালোবাসেন, সেখানে আপনি তো একটা অনুজীব মাত্র। আপনার কোন প্রশ্ন থাকতে নেই। আপনার মৃত্যু সংঘটিত হলে আপনিও মহিষ থেকে গরুতে রূপান্তরিত হতে থাকবেন এট্ইা একমাত্র নিশ্চিত গন্তব্য। কেননা আপনিও ৩৫ টাকার সফল অংশীদার।

চাকার নিচেই আপনার জীবনচক্র। অনবরত ঘূর্ণণের ভেতরেই আপনার শ্বাসপ্রশ্বাস-জীবন প্রণালি। আহা-উহু সর্বস্ব রোগের নিরাময় থেকে মুক্তি পেতে আপনাকে নিয়মিত গণতান্ত্রিক ঔষধ সেবন ও অর্থনীতির সমাজতান্ত্রীক খপ্পর থেকে চিরমুক্তি পেতে প্রতিদিন গঙ্গাস্নান পরবর্তি ধর্মশালা থেকে বৈদিক চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। আর আপনিও হয়ে উঠবেন এক উচ্চমধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের একেকটি মহিষ, পেশাদার কসাইয়ের আপনাকে রাতে আঁধারে মহিষ থেকে গরু বানানোর নিশ্চয়তা দিচ্ছে। আপনিও প্রস্তুত হোন হে লক্ষ্মিণদার!

ঘোাড়ার রোগ ও অন্যান্য আমলনামা

এজোচুরিয়া বা Tying up:

যথারীতি খাওয়া চালিয়ে একটি নির্দিষ্ট সময় আলস্য ও কাজবিহীন অবস্থায় কাটিয়ে হঠাত কাজে লাগানোর পরে এইরোগ দেখা দেয়। মায়োগ্লোবিনইউরিয়া ও মাসকুলার ডিজেনারেশন এই রোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য।


রোগের কারণ সমূহ
ক) খাদ্য ও অনুশীলন।
খ) প্রশিক্ষণে হঠাত পরিবর্তন।
গ) বংশগতি (Genetic Factors)
ঘ) থাইরয়েড হরমোনের কার্যক্রম হ্রাস।
ঙ) পূর্ববর্তী রোগের ইতিহাস।
চ) অন্যান্য - ইলেকট্রোলাইটস-এর অসামঞ্জস্যতা।

যে সব দেশে ঘোড়ার বহুল ব্যবহার রয়েছে সেখানে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে (শনি ও রবিবার) ঘোড়াকে পর্যাপ্ত খাবার দিয়ে বিশ্রামে রাখা হয়। কর্মবিহীন থাকা অবস্থায় বেশি খেয়ে প্রচুর গ্লাইকোজেন ঘোড়ার মাংসপেশীতে জমা হয়। সাপ্তাহিক ছুটির পরদিন (সোমবার) যখন হঠাত করে ওই ঘোড়াকে কাজে লাগানো হয়, তখনই এই জমে থাকা গ্লাইকোজেন রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ল্যাকটিক এসিডে পরিণত হয়। এই অতিরিক্ত ল্যাকটিক এসিড মাংসপেশীর নেক্রোসিস ঘটিয়ে মায়োগ্লোবিন (Myoglobin) বের করে দেয়, যা রক্তে মিশে পরে kidney র মাধ্যমে প্রস্রাবের সাথে বেরিয়ে যায় যা ঘন লাল রঙের হয়। এজন্য একে Black water disease ও বলা হয়। সাধারণত ছুটির পরদিন দেখা দেয় বলে রোগটি Monday Sickness disease নামেও পরিচিত।

লক্ষণসমূহ
ক. প্রচুর ঘাম হয়।
খ. চলনভঙ্গিতে আড়ষ্ঠতা থাকে।
গ. লাম্বার ও গ্লুটিয়াল পেশীতে প্রচন্ড ব্যথা হয়।
ঘ. শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি পায়।
ঙ. পেছনের পা শক্ত হয়ে যায় এবং কাঁপতে থাকে।
চ. মারাত্মক অবস্থায় ঘোড়া শুয়ে পড়ে এবং আর উঠে দাঁড়াতে পারে না। পেশীর প্রোটিন মায়োগ্লোবিন রক্ত¯্রােতে চলে যায়। ফলে গাঢ় বাদামী/লাল প্রস্রাব হয়।
ছ. মায়োগ্লোবিনিউরিক নেফ্রোসিস ও ইউরেমিয়ার কারণে আক্রান্ত ঘোড়া মারা যায়।



রোগ নির্ণয়
ক. জৈবরাসায়নিক পরীক্ষা
খ. আক্রান্ত ঘোড়ার সিরাম বর্ণহীন হয়।
গ. ECG এবং Serum Creatine phosphokinase (SCPK) এর অস্বাভাবিকতা নির্ণয়
করে পেশী বিনষ্ট হওয়ার মাত্রা নির্ধারণ করা যায়।


চিকিৎসা
ক. রেজিঃভেটেরিনারি ডাক্তার দেখান।
খ. উপসর্গ দেখা দেয়া মাত্রই ঘোড়াকে কাজ থেকে বিরত রাখতে হবে।
গ. Fluid /ফ্লুইড বা পানি জাতীয় খাবার বেশী বেশী দেওয়া।
ঘ. কর্টিকোস্টেরয়েডস জাতীয় ইনজেকশন
ঙ. আক্রান্ত স্থানে গরম শেক (warm application) প্রদান করলে কষ্ট লাঘব হয়।
প্রতিরোধ
ক. ঘোড়াকে বিশ্রামের সময় দানাদার খাদ্য কর্ম দিবসের থেকে অর্ধেক পরিমাণে দিতে হবে।
খ. বিশ্রামের পর ঘোড়াকে প্রথমে অল্প মাত্রার ব্যায়ামের পর ধীরে ধীরে কাজের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে।

অতএব হে পাঠক! আমাদের ঘোড়াও নেই রোগও নেই…


সালাম, নমস্কার ও আদাব যার যার ধর্ম অনুসারে উত্তর গ্রহণ করবেন। সকল ভাইরাস ও অন্যান্য রোগের উর্দ্ধে ধর্মধারক, শিল্পকারখানা, পুঁজিতন্ত্রের হাটবাজার, সামরিক সামঞ্জস্যতা, মিডিয়া ও রাজনীতির খপ্পরে পড়ে থাকা প্রেসনোট। সাধুদের সাবধানতার কোন প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন নেই শরীর কিংবা অশরীরের অধিবিদ্যার। সব পথ যখন বেঁকে যায় তখন হাতুড়ির কোন কাজ থাকতে নেই। উন্নয়নের কোন ফর্দ থাকতে নেই। সব কর্মই খালি। বিশ্বব্যাংকের নজরদারিতে আমাদের কোনো মাথা ব্যাথা নেই তদ্রুপ লোকাল ব্যাংক থেকে উধাও হয়ে যাওয়ায় আমাদের হৃৎপি-ে কাঁপে না কেননা সকল অর্থই অনর্থের মূল চাবিকাটি।


Pages