আদিপুরুষের দীর্ঘশ্বাস অথবা বুকের ভেতরে দীর্ঘ জীবনের চাষাবাদ - শাফি সমুদ্র

সর্বশেষ লেখা

Home Top Ad

প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা কোনো ফ্যাশেনবল বিষয় নয়, যা দিয়ে আপনি নিজের পাছায় একটা সীলমোহর লাগিয়ে ঘুরে বেড়াবেন...

বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৯

আদিপুরুষের দীর্ঘশ্বাস অথবা বুকের ভেতরে দীর্ঘ জীবনের চাষাবাদ

১.

আক্রান্ত আত্মায় যেন সহসা ভেসে যেতে পারি শকুনের বিশ্বস্ত ডানায়
সর্বগ্রাসী নদীর স্বভাবে সুরক্ষিত থাকুক আমার মন ও বয়সের আগুন

নক্ষত্রের কঙ্কাল:


এইতো নিভৃত অভিসারে নিজের কাছে ফিরে এসে ক্ষমা করেছো কতোটুকু দ্রবিভূত স্তব্ধতায় নিঃসঙ্গ সাঁকো নিদ্রাহীন রাতে ভাটিয়ালি গাইতে গাইতে তোমার চোখের ভেতরে ঢুকে গিয়েছিলো- একদিন আলো হাওয়ায় দুলতে দুলতে ভোরের অন্ধত্বে এমন হিংসা আর উত্তেজিত স্নেহে দু’জনে দংশীত হয়েছি- মুখের ভেতরে আস্ত একটা যৌবন কাঁদতে কাঁদতে ঘুমভাঙা সকাল ডেকে আনে নিরুত্ত্বাপ বিছানায়- সারারাতের খসে পড়া নক্ষত্রের কঙ্কাল মেঘের শরীর গড়িয়ে গড়িয়ে নেমে আসা অজস্র বৃষ্টির মুগ্ধতা গতরাতের পরিত্যক্ত বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে থাকে বেনামী পিপাসা- আমাদের শরীরে প্রতিদিন লুকিয়ে থাকে বিগত দুঃখের শিলালিপি সমকালীন বিষণ্ণতার বিষুবরেখা 


২,
বৃক্ষের বিস্তৃত বাকলের স্বেচ্ছাচারি মন আমাকে প্রদক্ষিণ করে
লুট করে নেয় হারানো ঘুমের দুপুর- বিশ্বস্ত সকালের সর্বস্ব


শীতের অপভ্রংশ:


খুব বিশ্বাস জমে গেছে নিমপাতায় অসুখবিসুখ তাড়ানো নিমরস- কার্যকরী বিধিমালায় আমাকেও তাড়িয়ে বেড়ায় তোমার ছায়া থেকে শরীর অশরীরি থেকে- বিপদ-আপদের ত্রিকুলে যেনো এই দূর্গত দুর্যোগ ভর না করে ভোর আর শীতের অপভ্রংশে- আমাদের প্রেমকাল চূর্ণ অন্ধকারে বিলীন এতোদিন রোদের শরীর ভেঙে আমাদের হারানো ঘুমের কঙ্কাল গ্রহণ করে ঈশ্বরের কামনা পাথর ও অগ্নির উপেক্ষা- স্তব্ধ আর নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়া ধানক্ষেতের পরিচর্যা থেকে উঠে আসা জ্ঞানবিজ্ঞানের উপাসনা আমাদেরকে স্থির আর দূরভিসন্ধির পথ দেখিয়েছিলো- কোনোদিন আমরা পরস্পর ভুলে থাকি বাড়ি-ঘর-বসবাস আমরা ভুলে থাকি সমস্ত উত্তরাধিকার- টুকরো টুকরো হাওয়ার ভেতরে অজস্রবার উড়িয়ে দিয়েছি প্রণীত বৃষ্টির অনাদীকাল  


৩.
জ্বলন্ত উনুনের পাশে আমাকে রেখে দাও নামহীন পরিচয়হীন আশ্রয়ে
সূর্যের অকৃতজ্ঞ সন্তানের মত সঙ্গাহীন করে রাখো নির্মোহ মৃত্তিকায়


শাশ্বত ঘুম:


নিজেকে কি করে এতো ক্ষুদ্রত্বে মাপি- এতো জ্যান্ত তরতাজা দুপুরে মাঠঘাট চষে বেড়ানো মানুষ গতরচাষে বেড়ে ওঠা চিরায়ত শস্যের বিকেল- তোমাদের উঠোনে দাপিয়ে বেড়ানো হলুদ ধানের সন্ধ্যায় কিভাবে নিজেকে ক্ষুদ্রতম ভাবতে পারি- কিভাবে নদী তার গোমর ভেঙে শাশ্বত ঘুমে তোমার বিছানায় নিমগ্ন থাকে চোখের ভেতরে এতো বৃষ্টির নিঃশ্বাস ওঁৎপেতে থাকে বালিশের কাছে- ধ্যানীমাঠ ছুঁয়ে আসা গল্পগুলো অলিখিত স্মৃতি ঘিরে নাচতে থাকে ঝরাপাতায় মোড়ানো আত্মপরিচয় ভুলে গাইতে থাকে নাম ভোলানো সন্ধাতারা- আয়নার সামনে মুখ ভার করে তুমি মেলে ধরো গলিত কান্নার মসৃণ রূপ ভেঙে-চুরে বহুদূর থেকে পালিয়ে আসে জরাজীর্ণ শীতের প্রবাহ- প্রাচীন বৃক্ষপ্রেমিকের কোমল চোখের ভেতর থেকে উতলে ওঠা একনিষ্ঠ প্রাণ- মৃত্তিকার সঞ্চিত ইতিহাসে বারবার ফিরে আসে তোমার অগোচরে- ভয় কিংবা সংশয়হীন স্পর্শে প্রতিদিন মিলিত হয় শুকনো পাতাদের আয়ু হারানো জীবনযাপনে

৪.
অন্ধ পরিধি ভেঙে অধিক দূরত্বে ডানা মেলে পরিভ্রমণ করেছো
ডানার ভেতর কান্নার সংসার গোপন গভীর সার্বভৌম


স্বৈরসম্পর্কিত বিশ্বাস:


আমাদের জরাজীর্ণ আয়না অসুখ অসুখ বলে চিৎকার দিয়ে মুখ থুবড়ে ঝুলে থাকে দেয়ালে- আয়নার ভেতরে লুকানো ইতিহাস সভ্যতা আর চরম আত্মসমর্পনে গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিলো- একদিন আমাদের অন্ধদৃষ্টির জঘণ্য দাসত্বে পুড়েছিলাম মাকড়শার জালের মতো চারিদিকে- বসন্তের ব্যাপারীদের তুমুল হৈচৈ হট্টগোল ছদ্মবেশি ছায়ার ভেতরে আমাদের বিগলিত মুখ শান্ত ও স্থির থাকে- গুপ্তহত্যায় ছায়াগুলো ক্রমশ ফ্যাকাশে মলিন নির্লজ্জ পরিণতিতে আর নির্ভয় উদাসীন হয়ে যায় স্বৈরসম্পর্কিত বিশ্বাসের বহুরেখা

বিশ্বাসগুলো মৃত মানুষদের মতো নির্জীব আর জলাভূমের শব্দ এক নির্মোহ শূন্যতায় সে এক বার্ধক্যর উৎসব জ্বলন্ত সূর্যে ক্ষত বিক্ষত ছায়ারা বিশৃঙ্খল জীবনে ফিরে আসে- পাখিদের অতল শূন্য জীবন মাছের তুচ্ছা প্রাণ আর ঘাসের খন্ডকালীন আয়ুতে আমাদের ঘোর দিশেহারা- উন্মত্ত জীবনযাপনের বিধিমালায় আমরা হারিয়ে ফেলি ধর্মের গুহাপথ- হারিয়ে যায় প্রতারিত চোখ- চরম হাহাকারে নির্বাসিত প্রতিশ্রুতি খুলে দেয় ছদ্মবেশি ধর্মের ইতিহাসে


৫.
মৃত্যুর অধিক নৃশংসতা- আপাদমস্তক খুনের কারুকাজ
তোমার হাতে চমৎকার নেচে যায় পোকামাকড় জীবন


সংশয়ের অভিজ্ঞান:


কী অপ্রতিরোধ্য হাওয়ায় উড়ে যাচ্ছে ভুলে থাকা শস্যক্ষেত- বিরহকালের বৃষ্টি নিঃস্বতাকে ধারণ করে আমাদের সাথে উড়ে যায় নাম ঠিকানাহীন কোনো গ্রামে- দিকবিদিক শূন্য করে স্নেহবর্জিত শব্দের ভেতর ঠিকঠাক উড়ে যাচ্ছি- মাঠ-ঘাট-শ্মশান পেরিয়ে মেঘেরা হুইসেল বাজিয়ে গুরুগম্ভীর স্বভাবে নিয়ে যায় শাশ্বত সমুদ্রের দিকে- সমুদ্রের ভেতরে উচ্ছিষ্ট চোখ আমাদের ফিরে দেয় তীরবর্তি ভূমিতে- তারপর  খুঁজি পাথরের বিচিত্র বেঁচে থাকা- সমুদ্রের সাথে বেড়ে ওঠা মাছেদের ছলচাতুরি জীবন দীর্ঘরাতে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া স্বেচ্ছাচারী মন

নিরাকার অভিমানে ঘর পালানো সন্ধ্যাতারা ঘুমিয়ে গেলে  পরিত্যাক্ত বৃষ্টির ভেতরে নদীর কাছে খুঁজে পাই পথের অঙ্গীকার- জলের গভীরে একে একে ছুঁড়তে থাকি সমস্ত ভুলের মার্জনা- অস্থির ও উদ্বেলিত ঘুমের শেষে শরীরময় ক্লান্তির সরলরেখায় পরস্পর চেয়ে থাকি আর ঠোঁটের নিচে আমরা রেখে দিই আসন্ন ঘুমের প্রস্তুতি



৬.
আমাদের বিশ্বাসের প্রতিবিশ্বাস আর মুখের প্রতিমুখোশ অনায়সে
ঘিরে রাখে বায়ুর প্রবল প্রতাপ কিংবা নিষ্ঠুর প্রজাপতির অকৃতজ্ঞ ডানা


কান্নার বিষফল:


তাহলে তোমাতেই শুরু হোক অনন্ত অন্ধকারের বিসর্জন- আমাদের ভাষা ও ঘৃণার প্রকম্পিত আকাশ জুড়ে শুধু কান্নার বিষ্ফল ভুলে যাচ্ছি দংশনের দিনে আমাদের অপেক্ষা ছিলো- প্রকান্ড এক বৃক্ষের বাকলে গাছেদের নির্জন রূপে সব কথা জানা হয়ে যায় পাতা ঝরা শব্দের মতো কানে বেজে ওঠে পথের কান্না পাতাদের সংসার জুড়ে এতো রোল এতো বিষাদে আমাদের মন খারাপ হয় না- হাতের আঙুলে সেইসব স্মৃতিকথা কীভাবে মুছে গেলো আমাদের ফিরে পাওয়া হয়নি বাতাসের আলিঙ্গন- অদ্ভুত মায়ায় গা জড়ানো নিঃশ্বাস বশীভূতকরণ মন্ত্রে নিরুদ্দেশ হয়ে যাচ্ছে- চোখ ভর্তি জল নিয়ে চারিদিকে সবুজের অবাধ বিচরণ- এতো ক্ষণজন্ম বেদনায় ভারাক্রান্ত মৃত্তিকা অবিণাশী গান ছেড়ে বহুদূর ছুটে যায় পথের ধুলোয়- মসৃণ জনপদে রক্তজবার মতো আমরা পুড়ে যাচ্ছি নির্বিকার- তোমার চুলের ভেতরে এই ব্রক্ষ্মা- অসহায়ের মতো চেয়ে থাকে নিঃসঙ্গ শয্যায়- রাতগুলো অশান্ত বিভ্রমে সমকালীন বেদনায় ছটফট করতে করতে চূর্ণ পাঁজরের ভেতরে


৭.
কুচক্রি রাতের বোবা ঘাস হয়ে যাই- বাতাসের কাতরতায়
নিজেকে ভেজাতে থাকি দ্বিখ-িত ক্রোধে বেঁচে থাকার রণকৌশলে

বয়:সন্ধিকাল জীবন:


নিমতলীর গাছগুলো বিক্রি হয়ে যাবার কথা ছিলো অসংখ্য কালো চোখের বয়:সন্ধিকাল- জীবন পেরিয়ে বংশপরম্পরায় এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলো পরস্পর চেয়ে থাকে অতিক্রান্ত দিন- রাতে মার্জনা শেষে চুপচাপ আকাশের দিকে মাথা উঁচু করে থাকে- আকাশের উপরে বিস্তীর্ণ ডানা মেলা ঈগলের ডাক ছুঁয়ে যায় হৃদয় অধ্যূষিত প্রবঞ্চনা- আহা আসন্ন শীতের হাকডাকে একে একে ঝরে পড়ে গাছের আয়ু গাছেদেরও নানান দুঃখ থাকে- পরস্পর বিচ্ছেদের তুমুল যন্ত্রণায় একদিন গাছেরাও ভুলে যায় তাদের জন্মবৃত্তান্ত- বৃত্তের পরিধি ভেঙে বিচ্ছিন্ন দীর্ঘশ্বাস শরীরজুড়ে তীব্র যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে- গাছের অন্তিম আয়ু করাতকলের চেরাইয়ের শব্দে বিভোর অনাগত অন্ধকারের জীবন- অসংখ্যবার এমন মৃত্যুর মিছিল প্রকম্পিত গাছের সংবেদনশীল ছায়া ভুলে যায় পথের মিছিল- বাতাসের উদাসীন মনোভাব কতোকাল এবেলা ওবেলা ছায়ার ভেতরে উড়ে বেড়ায় বৃক্ষের মনোবাঞ্জনা- অনির্দিষ্ট ছায়াবৃত্তে ছায়াগুলো কেবলই অদৃশ্য হয়ে করাতকলের শব্দে কেঁপে কেঁপে ওঠে গাছেদের হৃৎপিন্ড


৮.
তোমার চুলের ভেতর থেকে পালিয়ে আসা প্রবাহিত নদী
কবেই ভুলে গেছে ভুলে যাওয়া অগ্নিপথ- প্রতারিত দীর্ঘশ্বাস


দিকশূন্য নদী:


এ কেমন বুনো ঘুম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিভোর অন্ধকারে বসবাস- শাদাকালো চোখের ভেতরে অজানা উদ্যানে শোভিত নির্মোহ খোলস ভেঙে ঘুমেরা আগলে রেখেছে পথ- শরীরের ঘ্রাণে অন্ধ লোমকূপে গেঁথে আছে শাশ্বত কান্না নিজ দেহে ঢুকে পড়ে অনাদীকালের দুঃস্বপ্ন- বেদনার বীজ থেকে জন্ম বিচ্ছেদের প্রজাপতি তোমার ঘুম আরো সুসজ্জিত করে সারা রাত স্তব্ধ রাখে- এই সামান্য অস্থির কাতরতা রক্তের ভেতরে প্রবাহিত অঙ্কুরিত স্মৃতির বিষক্রিয়ায় ক্রমশ নীল হয়ে যাচ্ছো  

এমন অসভ্যর মতো ঘুম তোমার বিছানায় লুটোপুটি খায় বেওয়ারিশ শূন্যতায়- কতোকাল অপেক্ষায় বিরহবোধের বাসনা মাঝরাতে ক্রমশ দীর্ঘ ঘুমে অবিরাম ঢুকে পড়ে- এক দিকশূন্য নদী স্নায়ুর ভেতরে তছনছ করে ঢুকতে থাকে দিকভ্রান্ত জলধারা 



৯.
প্রকাশ্য দুপুরের কোনো মধ্যবর্তি সম্পর্ক ছাড়া
আমরা জেনে যাবো সমতলে বেঁচে থাকা জীবন বদলের ইতিহাস


বহুমুখি বিচ্ছিন্নতা:


আমি খুঁজিনা বহু ব্যবধানে রচিত দ্যুতিময় নগরের বিনিদ্র রজনী- বিকলাঙ্গ বৃক্ষের গুপ্তজ্ঞানে ফুঁটে থাকা অনাথ অন্ধকারের ফুল হতাশা আর কার্ণিশে ঝুলে থাকা বিষণœতার প্রবল রক্তজমাট চোখে বেঁচে থাকা কৃতকর্ম- ভ্রাতৃত্ববোধে উত্তরাধিকারহীন ইতিহাস ভেঙে খোলস পাল্টানো রূপরেখায় নিশ্চিত ভেসে যাওয়া মানুষের আয়ু- অহেতুক দৃশ্যবদলানো আয়নায় স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকে- মানুষের ভেতরে মানুষের একাকিত্ব সমাগত অন্ধকারে সংযত শহরের শরীরে মলিন- পরস্পর সামান্য চেয়ে থাকার অজুহাতে অগ্নিকুন্ডে নির্বাসিত আমাদের সত্তা ও বোধের পরিমিত জ্ঞান- কেউ কেউ চোখের ভেতরে রাতের নিমগ্ন কান্না লুকিয়ে গৃহহীন শূন্য উদ্যান খুঁজে ফেরে- অনুজ্জ্বল রক্তজবার হারিয়ে যাওয়া প্রস্থানপথ ধরে আমাদের মগজে হেঁটে যায় অন্ধকারের পরিভ্রমণ- অসংখ্য উৎপাতের দোহাই দিয়ে বুকের পাতায় লিখে রাখে আসন্ন মৃত্যুর উম্মাদনা- দূরত্বগুলো ক্রমশ বাড়তে বাড়তে নিজের ছায়া অতিক্রম করে প্রবাহিত রক্তের ভেতরে- নির্মিত নগরের উপখ্যান অসম্পুর্ণ থেকে যায় বহুমুখি বিচ্ছিন্নতায়



১০.
এত সংশয় এত লজ্জায় তুমি রেখে যাচ্ছো স্বপ্নভূক চোখের ভাষা
মরে যাবার মতো টুকটুকে লাল আর গাঢ় হলুদের ভেতর নিঃসঙ্গ


দ্বন্দ্ব-দ্বৈরথে:


কেমন করে ডাকলে সহসা খুলে যায় ঘুমের দরোজা- দরোজার আড়ালে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা ছায়াদের শরীরে ঝরে পড়ে গতোরাতের ছলচাতুরি- বোহেমিয়ান সময় ভেঙে-চুরে নিরাশার ছাই-ভষ্মে ক্ষত হতে হতে দৃশ্যকল্প পাল্টে যায়- আক্রান্ত আত্মার সাথে সর্বগ্রাসী রাতের দ্বন্দ্ব-দ্বৈরথ নিজের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেয় নিজেকে- এমন স্বভাবসিদ্ধ সীমারেখা বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন সংশয়ে আচ্ছন্ন ঘুমের বসবাস ছেড়ে পালিয়ে যায় জোছনায় ভেসে থাকা রূপালি কবুতর- অন্তর্গত দৃশ্যের ভেতরে নিঃসঙ্গ থাকে সবুজ উদ্ভিদ জীবন- জীবনের বিপরীতে অপ্রতিরোধ্য আগুনমালা নিরাশ্রয় স্বত্তাধিকারে গ্রাস করে সর্বময় বুকের ক্ষেত্রভূমিতে- বারবার দরোজা থেকে ফিরে যাওয়া দুরভিসন্ধি তুমুল শীত উপেক্ষা করে পুনরায় ফিরে আসে নির্মোহ শয্যায়- যন্ত্রণার রোষানলে- আমাদের বিমুগ্ধ চোখ অসহায়ের মতো স্পর্শ করে বাতাসের কঙ্কাল- দীর্ঘশ্বাসের করুণ পরিণতি শরীর সর্বস্ব মানুষের আলিঙ্গনে আকষ্মিক খুলে ফেলে অন্তর্বাস- নিখুঁত জীবনের পরিপাটি বারান্দায় অন্ধকারের অন্তিম আয়ু ভেঙে পড়ে পাথরের মতো শক্ত প্রাণ- পুনর্বার ঘুরে দাঁড়ায় সহজ সংস্করণে- বেঁচে থাকার বিধিমালায়



১১.
অনুগত বিশ্বাসের অধিক দ্রোহে স্নায়ুর ভেতর ঢুকে গেছে মেঘ
চেতনা শূন্য ঘুম বৃক্ষের পাশে তোমার অন্তর্ভেদী চোখ


প্রাচীন বনভূমি:


ছায়ার ভেতরে নিজেকে তুচ্ছ লাগে- রক্তমাংসহীন অবয়বে অসাঢ় উচ্ছিষ্ট প্রাণ নিয়ে বেঁচে থাকার এক প্রকরণে অতি ক্ষুদ্র হয়ে যাই- যখন জলের ভেতরে ভেসে ওঠা প্রতিচ্ছবি অকারণে ডাকতে থাকে প্রচন্ড ভয় আর সংকোচে নিজেকে উচ্ছেদ করে ফেলি- নিজের ভেতর থেকে নিজেকে বের করে ছুড়তে থাকি প্রাচীন বনভূমিতে- সংবেদনশীল রক্তপাতে কাতর নৈঃশব্দের আগ্নেয়োৎপাত মহামান্য বংশীবাদকের কণ্ঠনালি- অনাচারি শীতের রাতে বরফগলিত শূন্য হাহাকারে কেঁদে ওঠে দ্বিধাগ্রস্ত মনোভূমি প্রতিফলিত সূর্যের নানান রঙে- বিধ্বস্ত সমতলে ছায়াগুলো দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে যায়- ছায়াদের লম্বা শরীরে ঈশ্বরের গোলক ধাঁধাঁয় রহস্যময় জীবন বেমালুম পথ ভুলে কৃষ্ণচূড়ার ধ্যানে চূর্ণ- ক্রমাগত অস্থির ব্রক্ষ্মান্ডে বহুদিন নিজেকে খুঁজে ফিরেছি- শৈশবের সন্ধ্যাগুলো নগ্ন হয়ে জড়িয়ে ধরে সমস্ত দেহের উত্তাপ- তান্ত্রীক মেঘের সুতীক্ষ্ম নিশানায় টুকরো টুকরো নৈরাজ্যের আধিপত্য- বিভিষিকাময় আলোর উদ্যানে নিজেকে পোড়াতে পোড়াতে কয়লাদেহ ধারণ করে প্রণীত ভোরে দেবদূতের মতো উড়ে যাই সন্ন্যাসী গ্রামে



১২.
চোখের গভীরে আমার উদ্বিগ্ন আয়ুর কঙ্কাল নীরবে ক্ষয় হয়ে
আমাকে প্রদক্ষিণ করে শোনায় নিদ্রামগ্ন নির্জন ঘুমের কঙ্কন


প্রত্ন ইতিহাস:


প্রতিনিয়ত একে অপরকে অতিক্রম করছি বিষের চুম্বনে- ক্রমশ পৃথক হয়ে যাচ্ছি নিরাকার অভিমানে- আমরা ঢুকে পড়ি নয়নতারাদের সংসারে- অন্তহীন চিৎকারে উম্মাদের মতো নিজেকে টুকরো টুকরো করে মহানন্দার জলে ভাসিয়ে দিই- নিরপেক্ষ দৃশ্যকল্পে পূর্ব প্রতিশ্রুতিতে দূরে থাকছি অন্তর্ঘাতে মহাসমুদ্রে চোখ পুড়ে নিথর দেহশূন্য- খুব অসময়ে গম্ভীর আমাদের উৎপাদিত বিচ্ছিন্নতার মহাকাল- ঘাসেরাও বিপন্ন অনুভূতি অন্ধ নদীর দীর্ঘশ্বাসে মলিন- পাথরেরও জীবন আছে সংকীর্ণ জমাট বাঁধা শরীর এমন রক্ষণশীল জীবনযাপন অনভ্যস্ত পাথর জীবন- অনুভূতিহীন এক সরীসৃপ- সময় স্বত:স্ফূর্ত স্রোতের মতো প্রবাহমান অসংখ্য সবুজের সমারহে অনধিকারের গ্রামের দিকে ছুটতে ছুটতে কখনো কখনো নিজেকে অন্যকিছু মনে হয়- কুয়াশার শরীর থেকে বেরিয়ে আসা দুটো সবুজ চোখ খুঁজতে থাকে আদিপুরুষের প্রত্ন ইতিহাস- নির্বোধের মতো সারাক্ষণ পাথর কান্নার শব্দে বারবার ফিরে আসি পুনর্পাঠের সন্ধ্যায়- অকারণে ভুলে যাই আমার আদিপুরুষের দীর্ঘশ্বাস অথবা বুকের ভেতরে দীর্ঘ জীবনের চাষাবাদ  


১৩.
দুর্ভেদ্য অন্ধকার থেকে নিরাপদ রেখে আমাদের জীবনের অভ্যূদয়ে
এতটা কাছাকাছি এতটা নিমগ্নতা দীর্ঘ স্মৃতির ভেতর কুড়াতে থাকে সংশয়


জন্মান্ধ আয়না:


জন্মান্ধ আয়নার কাছে আমাদের অনেক ঋণ- মলিন চোখের অনর্গল মিথ্যাচার জীবনের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা সুনশান প্রবাহিত নদী চোখের ভেতরে বেড়ে ওঠে নির্দ্বিধায়- মাছেদের  সংসার ভেঙে গড়ে ওঠা ধাবমান স্রোতের দুঃসাহস পুনর্বাসিত বুকের গভীরে- নবীন মাছের উদ্দীপ্ত চোখ হঠাৎ থমকে গিয়ে জলের নিচে অদৃশ্য দীর্ঘ সাঁতার নিরাশার জলধারে- আমাদের মুখায়ব ভাসতে থাকা ঢেউজল ফিরিয়ে দেয় জলমুখ- উম্মাদের মতো হেসে ওঠে অতিষ্ঠ জীবন মাছের অকাল জীবনের মানে খুঁজতে গিয়ে অস্থির আত্মগোপনে চলে যায় দৃষ্টির সীমারেখা- কতোদূর গেলে পাবো অস্তিত্বের পুনর্জীবন জাগতিক মহামায়া- রূপান্তরীত জলরাশির গভীরে প্রসারিত জীবন প্রত্যাখ্যান করে ফিরে আসে উদ্বেলিত জলের জীবন- কৃতকর্মের অবাঞ্চিত অভিসম্পাত- প্রতিদিন আয়না শরীরে নিজেকে হণ্য হয়ে খুঁজি- পায়ের পথ ভেঙে জলের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে ক্রমাগত ভাঙতে থাকি নিজেকে- নিজের ভেতরে প্রচন্ড এক অভিমান লুকিয়ে মৃত্যুর বদলে মাছের জীবন ভিক্ষায় পুনর্জীবন খুঁজতে থাকি 


১৪. 
এতটা ভয়ের পরিসীমায় রাক্ষুসে স্বপ্ন গোলাপের নিচে কান্নায় ভেঙে পড়ে
এইটুকু স্বপ্ন গোলাপের গভীরে রঙিন হয়ে নির্মল থাকুক- সুন্দরে থাকুক


রক্তগোলাপের কঙ্কাল:


দূর্যোগের ভেতরে এ কেমন পরিণতি রক্তগোলাপের কঙ্কাল- ভাষাহীন এমন নির্জীব নৃতাত্ত্বিক আধিপত্যে আয়ু হারানো কৌশলকৈবর্ত্যে মাতাল করে তোলে গোটা গৃহময়- বামনচাষির ঘর ভেঙে অনাদীকালের স্বপ্নে চৌচির ছন্দবদ্ধ যুবতীর নিখুঁত চোখে পাললিক সৌরভ- অনাবিষ্কৃত চুলে উজাড় হওয়া অরণ্যের সন্ধ্যা সচ্ছ্বল এক সর্বনাশের প্রতিকৃতি- ঘর হারানো নদীর হাহাকারে কাঁচা রোদ বহুদূর পাড়ি দিয়ে মেঘের মলিন মুখ খুঁজতে থাকে- আহা রক্তগোলাপ সুরভীত ছায়ার ভেতরে কী খেলা করো স্নেহমাখা করুণ কোমল জীবন ছেড়ে এ কেমন রক্তপ্রবাল খেলা- প্ররোচনার অজুহাতে নতমুখি বিষের বিলাস- আত্মহারার উদ্যানে সর্বময় চোখের ভেতর নেচে ওঠে সহস্রাব্দের নক্ষত্রপুঞ্জ- প্রসারিত জীবন গ্রাহ্য করে যুবতীর দেহে নিঃসঙ্গতার অবিরাম আলো-আঁধারি নোনাঘ্রাণ- নদীর কল্লোলীত কান্নায় এতো বিভাজিত দুঃস্বপ্ন ছুটে আসে নৈসর্গিক প্লাবনে- পত্রপল্লবের দীর্ঘশ্বাস ছড়াতে ছড়াতে মাটিবর্তী বামনচাষি পুনরায় আবাদ করে রক্তগোলাপের হারিয়ে যাওয়া কঙ্কাল



Pages